Monday 19 August 2013

ড. জাফর ইকবালের মিথ্যা বলার অধিকার : অলিউল্লাহ নোমান

ড. জাফর ইকবাল একজন শিক্ষক। সায়েন্সফিকশনের চটকদার লেখকও বটে। চাকরি করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেটির নামের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক শব্দ রয়েছে। এ জন্য একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এই কৌশলের অংশ হিসেবে প্রথমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ছাত্রাবাসগুলোর নাম বদলের। ওলি-আউলিয়াদের নামে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। কিন্তু ওলি-আউলিয়াদের নাম পরিবর্তন করে ‘প্রীতি লতা’ হল, ‘জাহানারা ইমাম’ হলসহ তাদের চিন্তা-চেতনার নামকরণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ওলি-আউলিয়াদের নামে সাম্প্রদায়িক গন্ধ রয়েছে। সুতরাং অসাম্প্রদায়িক নাম দরকার। তার মস্তিষ্ক প্রসূত সায়েন্সফিকশন চিন্তা থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল আগের আওয়ামী জামানার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের আওয়ামী জামানা বললাম এ কারণে প্রথম নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। সিলেটবাসীর সম্মিলিত আন্দোলনে পিছু হটেন তারা। এই আন্দোলনে একাধিক প্রাণ গেছে। এর দায় কিন্তু জাফর ইকবালরা এড়াতে পারেন না বা পারবেন না। তাদের উসকানি ও প্ররোচনায়ই সেদিন সিলেটের মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী-বাম জোট আমলেও আরেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহানারা ইমামের মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবারও জেগে উঠে সিলেটবাসী। এই মূর্তি স্থাপনের সায়েন্সফিকশন উদ্যোক্তাদের অন্যতম হলেন ড. জাফর ইকবাল। সিলেটবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে তারা আবারও পিছু হটেন। এসব আমার আজকের লেখার বিষয় নয়। শুধু তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও আদর্শ বোঝানোর জন্য এগুলো বলা।
আমার আজকের বিষয় হলো ড. জাফর ইকবালের ‘মিথ্যা বলার অধিকার’ শিরোনামে লেখাটি নিয়ে। গত ৩ দিন আগে হঠাত্ করেই ফেসবুকে একটি পোস্ট পেলাম। এতে জাফর ইকবালের চেহারার সঙ্গে লেখা রয়েছে ‘মিথ্যা বলার অধিকার’। কৌতূহল নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য ক্লিক করলাম। শিরোনাম দেখে যা ভাবছিলাম লেখার সঙ্গে আমার ভাবনা মিলে যায়। ‘মিথ্যা বলার অধিকার’ শিরোনামটি জাস্টিফাই করার জন্য তিনি কয়েকটি উদাহরণ টানলেন। তার নিজের অভিজ্ঞতার কথাও বললেন এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। সেটা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতার প্রশ্ন তুলেছেন। সেটা তার একান্তই নিজের ব্যাপার। আমি যেখানে তার সঙ্গে প্রচণ্ড দ্বিমত পোষণ করি, সেটা হচ্ছে শাহবাগ আন্দোলন, হেফাজত, নাস্তিকতা, আমার দেশ এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গটি। এর সঙ্গে অধিকার প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন সেখানে তো আরও বেশি জোর দিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি।
তার লেখার তৃতীয় প্যারার শুরুতেই বলেছেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে কিছু ব্লগার তরুণ শাহবাগে অভাবনীয় আন্দোলন শুরু করেছিল। কথাটা একেবারেই সত্য। এখানে অসত্যের কিছু নেই। এই অভাবনীয় আন্দোলনের নেপথ্য ইন্ধনদাতা কারা, সেটা আমরা ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কোথা থেকে টাকা আসত, সেটাও ভারতের ‘ইন্ডিয়ান টাইমস’, সর্বশেষ কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ’ পত্রিকায় বিস্তারিত ছিল। এই ব্লগার তরুণদের আমার দেশ পত্রিকা নাস্তিক হিসেবে প্রচার করায় তারা নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে বলে তিনি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তারও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়। তিনি বলতে চেয়েছেন তার দাবি অনুযায়ী শাহবাগে জড়ো হওয়া ব্লগার তরুণদের সবাইকে আমার দেশ পত্রিকা নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার লেখাটিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে তিনি লিখে দিতে পারেন আমার দেশ পত্রিকাও বিশ্বাস করেনি জড়ো হওয়া সবাই নাস্তিক। এটাও একেবারেই সত্য, আমার দেশ সবাইকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেনি, কিন্তু তিনি উপস্থাপনার কথা বলেছেন। তার লেখায় বলা হয়েছে উপস্থাপনা ছিল সবাইকে নাস্তিক হিসেবে, কিন্তু এটা একেবারেই সত্য নয়। ড. জাফর ইকবালদের মতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে শাহবাগে নেতৃত্ব দেয়া ব্লগারদের পরিচিতি আমার দেশ পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছে মাত্র। যারা এত বড় বীর, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে শাহবাগে, তাদের পরিচিত জাতিকে জানানোর অধিকার কীি আমার দেশ পত্রিকার ছিল না? আমার দেশ এই ব্লগারদের ব্লগ থেকে উদ্ধৃত করে যেসব লেখা প্রকাশ করেছে তা কী অসত্য! যারা শাহবাগে আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরল-সহজ মানুষকে জড়ো করেছে, সেই নেতাদের চিন্তা, বিশ্বাস পাঠকদের জানানোটা কী অপরাধ! আমার দেশ জাতির চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যাদের ডাকে শাহবাগে হৈ-চৈ হচ্ছে তাদের চিন্তা ও বিশ্বাস হলো ইসলামকে কটাক্ষ করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলা। ড. জাফর ইকবাল সাহেব কি এই ব্লগারদের ব্লগে ইসলাম, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিগুলো অস্বীকার করতে পারবেন? তিনিও আসলে সেই চিন্তারই ধারক, বাহক এবং উসকানিদাতাদের একজন। এই উসকানির দায়েও একদিন তাকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
ড. জাফর ইকবাল সাহেব তার লেখার চতুর্থ প্যারার শুরুতেই বলেছেন ‘আমার দেশ’ স্বাধীন মত প্রকাশের কোনো পত্রিকা নয়। তার মতে আমার দেশ হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাসকে প্ররোচিত করার পত্রিকা। জাফর ইকবাল সাহেবকে প্রশ্ন রেখে বলতে চাই আমার দেশ কোন লেখাটি বা কোন প্রতিবেদনটি স্বাধীনতাবিরোধী বলে তার মনে হয়েছে। তার লেখার চেতনা অনুযায়ী তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ইসলাম ও মুসলমানদের কথা যারা বলেন, তারা হলো স্বাধীনতাবিরোধী। যদি ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা স্বাধীনতাবিরোধী হয়, যদি বর্তমান সরকারের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, দুঃশাসনের কথা বলা স্বাধীনতাবিরোধী হয়, সেটা আমার দেশ করছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার দেশ ড. জাফর ইকবালের ইসলামবিদ্ধেষীদের চিন্তা-চেতনা জাতির সামনে তুলে ধরেছে। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন চিন্তায় বিশ্বাস করেন। জাফর ইকবাল সাহেবরা যেই চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করেন দেশের মানুষ সেটাকে সমর্থন করবেন, নাকি জন্ম সূত্রে মানুষ যেই ধর্মীয় চিন্তা লালন করে আসছে সেটাকে ধারণ করবেন। আমার দেশ তো জাফর ইকবালকে বলেনি যে, আপনি আমাদের চেতনার সঙ্গে এসে যোগ দেন। আমার দেশ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে কোনো চুক্তি ছাড়াই যখন ভারতীয় ১৬০ চাকার গাড়ি আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, তখন স্বাধীনতার চেতনাধারী ড. জাফর ইকবালরা কোথায় ছিলেন? বাংলাদেশের নদী বন্ধ করে দিয়ে, তিতাসে বাঁধ দিয়ে যখন ভারতের এই বিশাল গাড়ি চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করা হলো, তখন কোথায় ছিল তাদের স্বাধীনতার চেতনা? আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের চেতনায় বিশ্বাস করে বলেই সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন। এখানেই জাফর ইকবালদের গায়ে যত জ্বালা। কারণ তারা যাদের উচ্ছিষ্ট ভোগ করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিতে চান, আমার দেশ সেখানে আপত্তি জানায়। শাহবাগের ‘অভাবনীয়’ আন্দোলনে অর্থ জোগানদাতা ছিল ভারত এটা তো আমার দেশ বলেনি। এটা ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই সংবাদ আমার দেশ বাংলাদেশের মানুষকে জানিয়েছে। এতে আঁতে ঘা লেগেছে জাফর ইকবালদের। তারা অন্যের ধর্ম বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা নিয়ে রম্য রচনা লিখতে পারবেন। অন্যের ধর্ম বিশ্বাসে তারা আঘাত দিতে পারেন। আর এটার জবাব দিলে তাদের মুক্ত চিন্তায় আঘাত লাগে!
ড. জাফর ইকবালের লেখার চেতনা অনুযায়ী বোঝা যায় তারা ধর্মবিদ্ধেষী যেসব প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটাই হলো মুক্তচিন্তা। তাদের চেতনার বাইরে কেউ কথা বললে সেটা মুক্তচিন্তা নয়। জাফর ইকবাল সাহেবরা তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের কথা লিখে মানুষকে প্ররোচিত করতে পারবেন। সেই অধিকার তার রয়েছে, কিন্তু তাদের মুক্তচিন্তার চেতনা অনুযায়ী অন্য কারও চিন্তা বা বিশ্বাসের কথা বলা যাবে না। অন্য কারও চিন্তা ও বিশ্বাসের কথা বললেই তাদের গায়ে কাঁটা লাগে। আসলে তারা ফ্যাসিজমে বিশ্বাসী। তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের বাইরে কিছু থাকতে পারবে না। তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের বাইরে কেউ কথা বললে দমন করতে হবে, নির্যাতন করে মেরে ফেলতে হবে—এটাই হলো জাফর ইকবালদের মুক্ত চিন্তা। তারা তাদের চিন্তা ও বিশ্বাস মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণ তাদের মুক্ত চিন্তাকে পাত্তা দেয় না। দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণকে ধারণ ও লালন করে। এখানেই তাদের সঙ্গে আমার দেশ-এর পার্থক্য। এ কারণেই গায়ে এত জ্বালা। জাফর ইকবালদের মুক্ত চিন্তার নামে মুক্ত আকাশের নিচে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, মুক্ত যৌনাচারে আমার দেশ বিশ্বাসী নয়। তারা কেমন মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত জগত্ চায়, শাহবাগে দেশের মানুষ দেখেছে। রাতে নারী-পুরুষের অবাধে রাত্রিযাপন যদি তাদের মুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হয়, সেই মুক্ত চিন্তা আমার দেশ ধারণ করে না। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ এবং হিন্দু সমাজসহ আরও যতসব ধর্মের লোক রয়েছে, তারা কেউ এ রকম মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করে না। সব ধর্মের সহাবস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে। এ রকম অবাধ মেলামেশার মুক্ত চিন্তায় কোনো ধর্মের মানুষ অন্তত বাংলাদেশে বিশ্বাস করতে পারে না।
জাফর ইকবাল সাহেব বলেছেন, আমার দেশ মিথ্যা প্ররোচনা দিয়েছে। এজন্য আমার দেশ সম্পাদককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু আমার দেশ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে সামনাসামনি বসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শাহবাগে জড়ো হওয়া ব্লগারদের ব্লগ থেকে যেসব বিষয় আমার দেশ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে, সেগুলো মাহমুদুর রহমান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। কই জাফর ইকবাল সাহেব এত বড় কম্পিউটার বিজ্ঞানী মাহমুদুর রহমানের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আসলেন না কেন? তখন চুপসে ছিলেন কেন? কোন নিরপেক্ষ জায়গায় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে সামনাসামনি বসে সেটা প্রমাণ করতে পারতেন। সেই হিম্মত তো কারও হয়নি। উল্টা যুক্তির ভাষা ত্যাগ করে অস্ত্র দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
ড. জাফর ইকবাল তার আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সেটা হলো ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সময় শিক্ষকদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ। জরুরি অবস্থার সরকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নেতাকে গ্রেফতার করেছিল। জাফর ইকবাল সাহেব, জরুরি অবস্থার সরকারের উদ্যোক্তা কিন্তু আপনারাই ছিলেন। আপনাদের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে জরুরি অবস্থার সরকার। আপনার নেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রকাশ্যে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তার আন্দোলনের ফসল ১/১১-এর জরুরি আইন। শুধু তা-ই নয়, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাহেবও দাবি করেছিলেন জরুরি অবস্থার সরকার হচ্ছে তার আন্দোলনের ফসল। জরুরি অবস্থার সরকার কার আন্দোলনের ফসল, এটা নিয়েও কিন্তু আমরা আপনাদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা দেখেছি। আপনার চিন্তা-চেতনার মুক্ত চিন্তার ধারক ও বাহক হচ্ছে ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সুতরাং আপনাদের মুক্ত চিন্তা কাদের বিরুদ্ধে, সেটা কিন্তু জাতির সামনে স্পষ্ট।
হেফাজতে ইসলামের ৫ মে অবস্থান কর্মসূচিতে গণহত্যার প্রসঙ্গেও তিনি লেখায় ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন। অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে মিথ্যাচারের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার লেখাটিতে। এ প্রসঙ্গে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে ১৫ সম্পাদকের বিবৃতিতে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে তার লেখায়। তিনি বলতে চেয়েছেন, অধিকারের পক্ষে আরও বড় কেউ বিবৃতি দিলে হতাশ হওয়ার কিছু থাকবে না। এত দিনে তিনি নিশ্চয়ই দেখেছেন জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সবাই সরকারের সমালোচনা করে আদিলুর রহমান খানকে মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে। এসব দেখে তার হার্টবিট আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। কারণ তার প্রভুরা আদিলুর রহমান খানের মুক্তি চেয়েছেন।
তিনি লেখাটির শেষ পর্যায়ে এসে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চেয়েছেন, হেফাজতের সমাবেশে রাতের আঁধারে কোনো গণহত্যা হয়নি। ৫ মে রাতে মতিঝিলে গণহত্যার ঘটনা কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ-এর প্রেস আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই রাতে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনকে বন্ধ করা হয়েছে। সুতরাং মিডিয়া যা ছিল সবই হলো তার মুক্ত চিন্তার ধারক ও বাহক। তিনি হাজার হাজার নিহত হওয়ার ঘটনা লোকমুখে প্রচারিত হওয়ার কথা উল্লেক করেছেন। কিন্তু কোরআন শরিফ পুড়িয়ে দেয়ার প্রচারণা না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন। কোরআন শরিফ তো আওয়ামী লীগের লোকরা পুড়িয়েছে। সেটা তো আর মুক্ত চিন্তার গণমাধ্যমগুলো প্রচার করবে না।
অধিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয় নিয়েও উপহাস করা হয়ে তার লেখায়। অধিকার যেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, সেটা তাদের চলমান অনুসন্ধানের একটি অংশমাত্র। তিনি বলতে চেয়েছেন, অধিকার মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে বিভ্রান্ত করছে বলেই প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অধিকার সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল, বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করলে নাম-ঠিকানা জমা দেবে। কেন সরকারের কাছে নাম-ঠিকানা দিচ্ছে না, সেটাও অধিকার জানিয়ে দিয়েছিল। মতিঝিলে গণহত্যার বিষয়ে হেফাজতে ইসলামও একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারাও সংগ্রহ করেছে সেই রাতে গণহত্যায় নিহতদের নাম-ঠিকানা। একদিন এই গণহত্যার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে। জাফর ইকবালদের মুক্তচিন্তার বাইরে যারা থাকবেন, তাদের গণহত্যা করা কোনো অপরাধ নয়। কারণ তারা তো আর মুক্ত চিন্তার মানুষ নয়, তারা হলো অমানুষ। তার চিন্তা-চেতনা ধারণ করে যারা কথা বলবেন, শুধু সেটাই বাকস্বাধীনতা। আর তাদের চিন্তা-চেতনার বাইরে হলে সেটা বাকস্বাধীনতার আওতায় পড়ে না।
জাফর ইকবাল সাহেবদের জানা উচিত, ৫ মে মতিঝিলে যারা এসেছিল তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তারা এদেশের মাটি ও মানুষের অংশ। শাহবাগে জড়ো হওয়া মানুষরা যেমন এদেশের জনতার অংশ, মতিঝিলে জড়ো হওয়া মানুষরাও জনতার অংশ। বরং শাহবাগে তাদের প্রভুদের টাকায় বিরিয়ানি খাইয়ে, নারী-পুরুষের একসঙ্গে আনন্দ-ফুর্তি করার সুযোগ করে দিয়ে জড়ো করা হয়েছিল। আর মতিঝিলে যারা এসেছিল, তারা স্বতঃস্ফূর্ত এসেছে। সুতরাং মতিঝিলে গণহত্যার বিচার একদিন হবে। প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বের হবে এবং জড়িতদের শাস্তি হবে। সে পর্যন্ত জাফর ইকবালরা বেঁচে থাকুক, সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত

No comments:

Post a Comment