Friday 23 August 2013

বগুড়ায় জঙ্গি সংগঠন ‘বিইএম’র আস্তানাটি আ.লীগ নেতার বাড়ি : অভিযানের পর থেকে মালিক পলাতক

বগুড়ায় উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘বিইএম’ যে বাড়িটি আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করত, সেটি এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার। বৃহস্পতিবার ওই বাড়ি থেকে বিপুল অস্ত্রসহ নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের তিন সদস্যকে আটক করে র্যাব।
র্যাব সদস্যরা বগুড়া শহরের যে বাড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আস্তানার সন্ধান পেয়েছেন, সেই বাড়ির মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন। এর আগে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়ার যে বাড়ি থেকে ট্রাকভর্তি গুলি উদ্ধার হয়েছিল, সেই বাড়ির মালিকও ছিলেন আওয়ামী কৃষক লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি থেকে একের পর এক জঙ্গি গ্রেফতার এবং আস্তানার সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় জনমনে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার জবানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে যে বাড়ি থেকে র্যাব সদস্যরা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসহ তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে, সে বাড়ির মালিক দুলাল হোসেন ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়া তিনি জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার। দুলালের ভগ্নিপতি সেই যুবলীগ নেতার প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই ওই বাড়িটিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর আগে র্যাব সদস্যরা সেখান থেকে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর বাড়ির মালিকের সন্ধানে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েক দফা অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি। জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বগুড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধার ও ৩ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে দেশের কিছু মিডিয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে। দৈনিক প্রথম আলো তাদের অনলাইনে রিপোর্ট করে ‘বগুড়ায় শিবিরের মেস থেকে অস্ত্র উদ্ধার’ শিরোনামে। তখন অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু না বললেও দৈনিকটি র্যাব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদটি প্রচার করে। তবে পরে রাতে সংবাদটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে তারা।
এর আগে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কোথাও থেকে গ্রেফতারের পর সেই বাড়ির মালিকের পরিচয় ফলাও করে প্রচার করেছে মিডিয়া। কিন্তু বগুড়ায় বৃহস্পতিবার নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের আস্তানা পাওয়ার পরও বাড়িওয়ালা আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে কোথাও কোনো সংবাদ না আসায় অবাক হয়েছে এলাকাবাসী।
‘বিইএম’ নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আস্তানা আবিষ্কারের আগে জেএমবি নেতা বাংলাভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন। শহরের অনেক জনাকীর্ণ এলাকা ছেড়ে জঙ্গিরা ঠনঠনিয়া এলাকায় কেন আশ্রয় নেয়—তা নিরাপত্তা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির ধরন ভিন্ন। এসব বাড়ির চতুর্দিকেই রাস্তা রয়েছে। ফলে জরুরি মুহূর্তে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের পালানোর সহজ পথ থাকায় এ এলাকাকে তাদের নিরাপদ আস্তানা মনে করে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর আগে ২০০৩ সালের ২৭ জুন রাতে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়া গ্রামে আওয়ামী কৃষক লীগ নেতা আখলাকুর রহমান পিন্টুর বাড়ি থেকে ট্রাকভর্তি রাইফেলের গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে পিন্টু পলাতক রয়েছে।
এদিকে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মিরান হোসেন ও এএসপি আবু সাঈদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ঠনঠনিয়া জবানী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দুলালের মেসে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পান। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ১৫ জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রেফতার করা হয় ৩ জনকে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত এখান থেকে সাব-মেশিনগান, জার্মানির তৈরি একটি এলএমজি, আমেরিকার তৈরি একটি পিস্তল, একটি এমোনিশন ড্রাম, তিনটি ম্যাগাজিন, ৮০ রাউন্ড গুলি, ধারালো অস্ত্র, জেহাদি বই, কোন দেশে কি অস্ত্র পাওয়া যায়—তার একটি ক্যাটালগ ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের শিডিউল উদ্ধার করা হয়। অভিযানে গ্রেফতার করা ব্যক্তিরা হলো—দিনাজপুরের ফিরোজ আলম (৩৫), ঢাকার কমলাপুরের মোহাম্মদ নাহিদ (২০) ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বারহান শেখ বাবা (২০)। অভিযান চলাকালে র্যাবের এনডিএডি আলিম, করপোরাল মতিয়ার, জীবন ও এএসআই বিজিত আহত হন। এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব নিশ্চিত হয়েছে জেএমবির লোকেরাই ‘বিইএম’ নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে দেশে তাদের তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

দেইখা লন বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোর মালিক কারা

সত্যিকারের সাংবাদিকদের হাত থেকে বাংলাদেশে ব্যাবসায়ী / শিল্পপতিদের হাতে সর্বোপরি কর্পোরেট হাউজগুলির নিয়ন্ত্রণে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার নিয়ন্ত্রন কিভাবে চলে গেছে বা যাচ্ছে নিচে তার কিছু উদাহরন দেয়া হলো। দু-একটি ব্যাতিক্রমও এখানে আছে। তবে কতদিন থাকবে তাই এখন দেখার বিষয়। তাই স্বাভাবিকভাবে শিল্পপতি/ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসায়িক স্বার্থই যে অন্য যেকোন কিছুর চাইতে বেশী গুরুত্ব রাখবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঠক / শ্রোতা / দর্শক অথবা দেশের স্বার্থ এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

পত্রিকার সম্পাদক বা টিভির বার্তা প্রধান এর সদিচ্ছাও মূখ্য নয় বরং ফাইন্যান্সার এর ইচ্ছাই মূখ্য। যারা এখনও কোন মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন নি তাদের চেষ্টা হলো একটা নিজের মিডিয়া প্রতিষ্ঠা । আর তা না হলে পুরোনো মিডিয়াগুলির মাঝ থেকে যেকোন একটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া। আর একারনেই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নাটক পর্দার আড়ালে বা সামনে ঘটে চলেছে ।


প্রথমে আমরা এখানে টিভি চ্যানেলগুলোর মালিকানা দেখবো।  তারপর পত্রিকাগুলোর মালিকানা দেখবো ।

দেশে প্রায় ২২ টি টিভি চ্যানেল আছে । আসুন এক নজরে দেখে নিই এই সব টিভি চ্যানেলের মালিক কারা কারা । 

১। ইনডিপেনডেন্ট টিভি : মালিক আওয়ামী ব্যবসায়ী দেউলিয়া সালমান এফ রহমান । 

২। ৭১ টিভি : মালিক কট্টর আওয়ামী বাম সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ও মেঘনা গ্রুপ। 

৩। দেশ টিভি : মালিক আওয়ামী সাবেক এম. পি সাবের চৌধরী কিন্তু চালাচ্ছেন আওয়ামী এম . পি আসাদুজ্জামান নুর । 

৪। বৈশাখী টিভি : মালিক আওয়ামীপন্থী ব্যাবসায়ী গ্রুপ ডেসটিনি । কিন্তু চালাচ্ছেন আওয়ামী - বাম সাংবাদিক নেতা মন্জুরুল আহসান বুলবুল । 

৫। গাজী টিভি : মালিক আওয়ামী এম.পি গাজী গাজী গোলাম দস্তগীর। 

৬। বাংলাভিশন : চালাচ্ছেন এক কালের বাম যুব নেতা মোস্তফা ফিরোজ । সব চাইতে বেশি শেয়ার সাবেক নগর পিতা বি এন পি এর সাদেক হোসেন খোকার ।

৭। চ্যানেল আই : মালিক ফরিদুর রেজা সাগর , বাম-আওয়ামী সাংকৃতিক কর্মী। 

৮ । এটি এন বাংলা : মালিক মাহফুজুর রহমান । আওয়ামী লীগের মানুষ । চালাচ্ছেন আওয়ামী বাম সাংবাদিক জ .ই . মামুন ।

৯। এটি এন নিউজ : চালাচ্ছেন আওয়ামী পন্থী মুন্নী সাহা । 

১০। মোহনা টিভি : মালিক আওয়ামী এম.পি কামাল মজুমদার।

১১। সময় টিভি : মালিক আইন প্রতিমন্ত্রী  কামরুল ইসলামের ভাই 

১২। চ্যানেল ২৪ : আওয়ামী লীগ নেতা ও হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ। সাবেক আওয়ামী নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সব হুকুম চলে। 

১৩। এন টিভি : বি .এন পি এর ফালু সাহেবের । কিন্তু প্রফেশনাল হবার চেষ্টা করতাছে । কিন্তু সাংবাদিক গুলা আ. লীগ এর । 

১৪ । দিগন্ত টিভি : ভয়ে ভয়ে চলতাছে । কখন কি জানি হয় । মালিক জামাত নেতা মীর কাশেম

১৫ । ইসলামী টিভি : যেমন ছিল আছে । নো কমেন্ট । বি.এন.পি নেতা ও খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কানদার।

১৬ । বিটিভি : মালিক যখন যে আসে সে । আমাগো টিভি, সরকারী টিভি ।

১৭। চ্যানেল ১ : এখন বন্ধ করা । কিন্তু মালিক ছিলেন বি.এন.পির নেতা মির্জা আব্বাস ও গিয়াসুদ্দিন মামুন । বন্ধ হবার কারন টা শুধু রাজনৈতিক । 

১৮। আর. টিভি : আওয়ামীপন্থী মালিক বেঙ্গল গ্রুপ । 

১৯। এস এ টি ভি ঃ এস আলম গ্রুপের । মালিক সাবেক আওয়ামী নেতা 

২০) চ্যানেল ৯ ঃ বিএনপি পন্থী এনায়েতুর রহমান বাপ্পি ও আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের ভাবি ।

২১) ই টি ভি ঃ  একুশে টেলিভিশনের মূল উদ্যেক্তা ছিলেন ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মাহমুদ। একুশে টেলিভিশনের ৭০ ভাগ মালিকানা টেলিভিশনটির বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের। বাকী ৩০ ভাগের মালিকানা আগের ১৩ জন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬ জনের ৫ ভাগ করে। তারা হচ্ছেন রউফ চৌধুরি (র‌্যাংগস গ্র“প), এমরান মাহমুদ (মেট্রোওয়েভ), অঞ্জন চৌধুরি (স্কায়ার), আব্দুস সালাম (সারাইটেক্স), লিয়কত হোসেন (এম এ এস স্কায়ার গ্র“প), তপন চৌধুরি, নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরি, আজম চৌধুরি, রুমি হোসেন, এ কে সালেক। 
মুলত অধিকাংশই আওয়ামীপন্থী ব্যাবসায়ী 

২২) মাছরাঙ্গা টিভি ঃ স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী । যারা মুলত আওয়ামী ও বাম সমর্থক 

২৩) মাই টি ভি ঃ হাসিনার কাছের লোক নাসির উদ্দিন সাথী ।

২৪) যমুনা টি ভি ঃ যমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুল । যিনি আওয়ামীলীগের নমিনেশন নেওয়ার চেষ্টায় আছেন ।

সাকার ছিল একটী চ্যানেল। নিউজের। সিএসবি নামের। কিন্তু ১/১১ এর সময় বিপ্লবী হতে গিয়ে সরকারের কোপানলে পড়ে বন্ধ হয়েছে।

১/১১ না হলে ফালু আরেকটী চ্যানেল আসত সেটার নাম হত "এন টিভি প্লাস" মেশিনারিজ ও নাকি এসে গিয়েছিল। ১/১১ এর ঝরে স্তগিত।

সালাহুদ্দিন ও নাসির উদ্দিন পিন্টূও অনুমতি পাইছিল এসএন টিভি নামে। ১/১১ এ শেষ। 





এবার দেখবো পত্রিকার মালিকানা ঃ 


১) বসুন্ধরা গ্রুপ  : আহমেদ আকবর সোবহান। যিনি একজন সুবিধাবাধী লোক । তবে বর্তমানে তার নিচের তালিকার মিডিয়া গুলো দিয়ে আওয়ামীলীগের এককভাবে দালালী করে যাচ্ছে
দৈনিক কালের কন্ঠ
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
The Daily Sun
banglanews24.com

 ২) ট্রান্সকম গ্রুপ: লতিফুর রহমান । যিনি ও একজন আওয়ামী ও বাম ঘরনার ব্যাক্তি। তার মালিকানায় আছে .........
দৈনিক প্রথম আলো
The Daily Star
ABC Radio

৩) হা-মীম গ্রুপ: এ.কে.আজাদ। ফরিদপুর থেকে আওয়ামী এম্পি প্রার্থী । তার মালিকানায় হোলো
দৈনিক সমকাল

৪) র‌্যাংগস গ্রুপ: রউফ চৌধুরী আওয়ামী পন্থী ব্যাবসায়ীর
দৈনিক সকালের খবর

৫) ইউনিক গ্রুপ: নুর আলী। আরও আছে পিএইচপি গ্রুপ
দৈনিক আমাদের সময়

৬) শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সাল মান এফ রহমানের
বেক্সিমকো গ্রুপ:
The Daily Independent

bdnews24.com
দৈনিক মুক্তকন্ঠ (অধুনালুপ্ত)


৭) গ্লোব-জনকন্ঠ গ্রুপ: আতিকুল্লাহ খান মাসুদ । যিনি আওয়ামীলীগের কাছের লোক এবং এম্পি পদপ্রার্থী । তার মালিকানায় দৈনিক দৈনিক জনকন্ঠ

৮) ডেসটিনি গ্রুপ: সেক্টর কমান্ডার দুর্নীতিবাজ আওয়ামী নেতা হারুনুর রশিদের মালিকানায় আছে
দৈনিক ডেসটিনি
দৈনিক অপরাধকন্ঠ


৯) এইসআরসি গ্রুপ: সাইদ হোসেন চৌধুরী। যিনি আওয়ামী নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর ভাই । তার মালিকানায় দৈনিক যায়যায়দিন

১০) কর্ণফুলী গ্রুপ: বিসিবির সাবেক সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা সাবের হোসনে চৌধুরর মালিকানায় আছে .........
দৈনিক ভোরের কাগজ
দৈনিক দিনের শেষে



১১) দিগন্ত মিডিয়াঃ জামায়াতপন্থী ব্যাবসায়ীদের মালিকানায় একটি গ্রুপের মালিকানায় আছে 
দৈনিক নয়াদিগন্ত

১২) দৈনিক সংগ্রাম ঃ জামায়াতে ইসলামের মুখপাত্

১৩) যমুনা গ্রুপ: / আওয়ামী সমর্থিত ব্যাবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলের
দৈনিক যুগান্তর

১৪)ইত্তেফাক গ্রুপ: আনোয়ার হোসেন মন্জু। তিনি শেখ মুজিবের বন্ধু তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে । তার প্রকাশনায় আছে
দৈনিক ইত্তেফাক
সাপ্তাহিক রোববার
The New Nation


১৫) আওয়ামী লীগ নেতা আহমেদুল কবীরের
দৈনিক সংবাদ


১৬) এ.এস.এম. বাহাউদ্দিন। যিনি মাওলানা মান্নানের ছেলে ছিলেন । এক সময় বিএনপিপন্থী ছিলেন । এখন আওয়ামীলীগের সমর্থক হিসাবে কাজ করতেছেন । তার প্রকাশনার ইনকিলাবের অধিকাংশ মালিকানা শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারী আওয়ামী এম্পি লোটাস কামাল কিনে নেন ।
দৈনিক ইনকিলাব
সাপ্তাহিক পূণিঁমা


১৭) ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। একসময় বিএনপির নেতা ছিলেন । পরে বিএনপি ছেড়ে নিজেই দল করেন । তার মালিকানায় আছে
দৈনিক দেশবাংলা

১৮) মতিউর রহমান চৌধুরীঃ ডানপন্থী বলা হয় । তার মালিকানায় আছে
দৈনিক মানবজমিন

১৯) সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের মালিকানায় আছে
দৈনিক আমার দেশ


এই হল আমাদের দেশের অধিকাংশ মিডিয়ার মালিকানার হালছাল ।


পোস্ট রেফারেন্স ঃ

 http://www.somewhereinblog.net/blog/mztanim/29790893 

http://www.somewhereinblog.net/blog/pressclub/29139473 

Monday 19 August 2013

ড. জাফর ইকবালের মিথ্যা বলার অধিকার : অলিউল্লাহ নোমান

ড. জাফর ইকবাল একজন শিক্ষক। সায়েন্সফিকশনের চটকদার লেখকও বটে। চাকরি করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেটির নামের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক শব্দ রয়েছে। এ জন্য একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এই কৌশলের অংশ হিসেবে প্রথমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ছাত্রাবাসগুলোর নাম বদলের। ওলি-আউলিয়াদের নামে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। কিন্তু ওলি-আউলিয়াদের নাম পরিবর্তন করে ‘প্রীতি লতা’ হল, ‘জাহানারা ইমাম’ হলসহ তাদের চিন্তা-চেতনার নামকরণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ওলি-আউলিয়াদের নামে সাম্প্রদায়িক গন্ধ রয়েছে। সুতরাং অসাম্প্রদায়িক নাম দরকার। তার মস্তিষ্ক প্রসূত সায়েন্সফিকশন চিন্তা থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল আগের আওয়ামী জামানার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের আওয়ামী জামানা বললাম এ কারণে প্রথম নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। সিলেটবাসীর সম্মিলিত আন্দোলনে পিছু হটেন তারা। এই আন্দোলনে একাধিক প্রাণ গেছে। এর দায় কিন্তু জাফর ইকবালরা এড়াতে পারেন না বা পারবেন না। তাদের উসকানি ও প্ররোচনায়ই সেদিন সিলেটের মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী-বাম জোট আমলেও আরেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহানারা ইমামের মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবারও জেগে উঠে সিলেটবাসী। এই মূর্তি স্থাপনের সায়েন্সফিকশন উদ্যোক্তাদের অন্যতম হলেন ড. জাফর ইকবাল। সিলেটবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে তারা আবারও পিছু হটেন। এসব আমার আজকের লেখার বিষয় নয়। শুধু তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও আদর্শ বোঝানোর জন্য এগুলো বলা।
আমার আজকের বিষয় হলো ড. জাফর ইকবালের ‘মিথ্যা বলার অধিকার’ শিরোনামে লেখাটি নিয়ে। গত ৩ দিন আগে হঠাত্ করেই ফেসবুকে একটি পোস্ট পেলাম। এতে জাফর ইকবালের চেহারার সঙ্গে লেখা রয়েছে ‘মিথ্যা বলার অধিকার’। কৌতূহল নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য ক্লিক করলাম। শিরোনাম দেখে যা ভাবছিলাম লেখার সঙ্গে আমার ভাবনা মিলে যায়। ‘মিথ্যা বলার অধিকার’ শিরোনামটি জাস্টিফাই করার জন্য তিনি কয়েকটি উদাহরণ টানলেন। তার নিজের অভিজ্ঞতার কথাও বললেন এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। সেটা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতার প্রশ্ন তুলেছেন। সেটা তার একান্তই নিজের ব্যাপার। আমি যেখানে তার সঙ্গে প্রচণ্ড দ্বিমত পোষণ করি, সেটা হচ্ছে শাহবাগ আন্দোলন, হেফাজত, নাস্তিকতা, আমার দেশ এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গটি। এর সঙ্গে অধিকার প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন সেখানে তো আরও বেশি জোর দিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি।
তার লেখার তৃতীয় প্যারার শুরুতেই বলেছেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে কিছু ব্লগার তরুণ শাহবাগে অভাবনীয় আন্দোলন শুরু করেছিল। কথাটা একেবারেই সত্য। এখানে অসত্যের কিছু নেই। এই অভাবনীয় আন্দোলনের নেপথ্য ইন্ধনদাতা কারা, সেটা আমরা ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কোথা থেকে টাকা আসত, সেটাও ভারতের ‘ইন্ডিয়ান টাইমস’, সর্বশেষ কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ’ পত্রিকায় বিস্তারিত ছিল। এই ব্লগার তরুণদের আমার দেশ পত্রিকা নাস্তিক হিসেবে প্রচার করায় তারা নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে বলে তিনি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তারও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়। তিনি বলতে চেয়েছেন তার দাবি অনুযায়ী শাহবাগে জড়ো হওয়া ব্লগার তরুণদের সবাইকে আমার দেশ পত্রিকা নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার লেখাটিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে তিনি লিখে দিতে পারেন আমার দেশ পত্রিকাও বিশ্বাস করেনি জড়ো হওয়া সবাই নাস্তিক। এটাও একেবারেই সত্য, আমার দেশ সবাইকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেনি, কিন্তু তিনি উপস্থাপনার কথা বলেছেন। তার লেখায় বলা হয়েছে উপস্থাপনা ছিল সবাইকে নাস্তিক হিসেবে, কিন্তু এটা একেবারেই সত্য নয়। ড. জাফর ইকবালদের মতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে শাহবাগে নেতৃত্ব দেয়া ব্লগারদের পরিচিতি আমার দেশ পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছে মাত্র। যারা এত বড় বীর, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে শাহবাগে, তাদের পরিচিত জাতিকে জানানোর অধিকার কীি আমার দেশ পত্রিকার ছিল না? আমার দেশ এই ব্লগারদের ব্লগ থেকে উদ্ধৃত করে যেসব লেখা প্রকাশ করেছে তা কী অসত্য! যারা শাহবাগে আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরল-সহজ মানুষকে জড়ো করেছে, সেই নেতাদের চিন্তা, বিশ্বাস পাঠকদের জানানোটা কী অপরাধ! আমার দেশ জাতির চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যাদের ডাকে শাহবাগে হৈ-চৈ হচ্ছে তাদের চিন্তা ও বিশ্বাস হলো ইসলামকে কটাক্ষ করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলা। ড. জাফর ইকবাল সাহেব কি এই ব্লগারদের ব্লগে ইসলাম, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিগুলো অস্বীকার করতে পারবেন? তিনিও আসলে সেই চিন্তারই ধারক, বাহক এবং উসকানিদাতাদের একজন। এই উসকানির দায়েও একদিন তাকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
ড. জাফর ইকবাল সাহেব তার লেখার চতুর্থ প্যারার শুরুতেই বলেছেন ‘আমার দেশ’ স্বাধীন মত প্রকাশের কোনো পত্রিকা নয়। তার মতে আমার দেশ হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাসকে প্ররোচিত করার পত্রিকা। জাফর ইকবাল সাহেবকে প্রশ্ন রেখে বলতে চাই আমার দেশ কোন লেখাটি বা কোন প্রতিবেদনটি স্বাধীনতাবিরোধী বলে তার মনে হয়েছে। তার লেখার চেতনা অনুযায়ী তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ইসলাম ও মুসলমানদের কথা যারা বলেন, তারা হলো স্বাধীনতাবিরোধী। যদি ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা স্বাধীনতাবিরোধী হয়, যদি বর্তমান সরকারের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, দুঃশাসনের কথা বলা স্বাধীনতাবিরোধী হয়, সেটা আমার দেশ করছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার দেশ ড. জাফর ইকবালের ইসলামবিদ্ধেষীদের চিন্তা-চেতনা জাতির সামনে তুলে ধরেছে। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন চিন্তায় বিশ্বাস করেন। জাফর ইকবাল সাহেবরা যেই চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করেন দেশের মানুষ সেটাকে সমর্থন করবেন, নাকি জন্ম সূত্রে মানুষ যেই ধর্মীয় চিন্তা লালন করে আসছে সেটাকে ধারণ করবেন। আমার দেশ তো জাফর ইকবালকে বলেনি যে, আপনি আমাদের চেতনার সঙ্গে এসে যোগ দেন। আমার দেশ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে কোনো চুক্তি ছাড়াই যখন ভারতীয় ১৬০ চাকার গাড়ি আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, তখন স্বাধীনতার চেতনাধারী ড. জাফর ইকবালরা কোথায় ছিলেন? বাংলাদেশের নদী বন্ধ করে দিয়ে, তিতাসে বাঁধ দিয়ে যখন ভারতের এই বিশাল গাড়ি চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করা হলো, তখন কোথায় ছিল তাদের স্বাধীনতার চেতনা? আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের চেতনায় বিশ্বাস করে বলেই সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন। এখানেই জাফর ইকবালদের গায়ে যত জ্বালা। কারণ তারা যাদের উচ্ছিষ্ট ভোগ করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিতে চান, আমার দেশ সেখানে আপত্তি জানায়। শাহবাগের ‘অভাবনীয়’ আন্দোলনে অর্থ জোগানদাতা ছিল ভারত এটা তো আমার দেশ বলেনি। এটা ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই সংবাদ আমার দেশ বাংলাদেশের মানুষকে জানিয়েছে। এতে আঁতে ঘা লেগেছে জাফর ইকবালদের। তারা অন্যের ধর্ম বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা নিয়ে রম্য রচনা লিখতে পারবেন। অন্যের ধর্ম বিশ্বাসে তারা আঘাত দিতে পারেন। আর এটার জবাব দিলে তাদের মুক্ত চিন্তায় আঘাত লাগে!
ড. জাফর ইকবালের লেখার চেতনা অনুযায়ী বোঝা যায় তারা ধর্মবিদ্ধেষী যেসব প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটাই হলো মুক্তচিন্তা। তাদের চেতনার বাইরে কেউ কথা বললে সেটা মুক্তচিন্তা নয়। জাফর ইকবাল সাহেবরা তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের কথা লিখে মানুষকে প্ররোচিত করতে পারবেন। সেই অধিকার তার রয়েছে, কিন্তু তাদের মুক্তচিন্তার চেতনা অনুযায়ী অন্য কারও চিন্তা বা বিশ্বাসের কথা বলা যাবে না। অন্য কারও চিন্তা ও বিশ্বাসের কথা বললেই তাদের গায়ে কাঁটা লাগে। আসলে তারা ফ্যাসিজমে বিশ্বাসী। তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের বাইরে কিছু থাকতে পারবে না। তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের বাইরে কেউ কথা বললে দমন করতে হবে, নির্যাতন করে মেরে ফেলতে হবে—এটাই হলো জাফর ইকবালদের মুক্ত চিন্তা। তারা তাদের চিন্তা ও বিশ্বাস মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণ তাদের মুক্ত চিন্তাকে পাত্তা দেয় না। দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণকে ধারণ ও লালন করে। এখানেই তাদের সঙ্গে আমার দেশ-এর পার্থক্য। এ কারণেই গায়ে এত জ্বালা। জাফর ইকবালদের মুক্ত চিন্তার নামে মুক্ত আকাশের নিচে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, মুক্ত যৌনাচারে আমার দেশ বিশ্বাসী নয়। তারা কেমন মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত জগত্ চায়, শাহবাগে দেশের মানুষ দেখেছে। রাতে নারী-পুরুষের অবাধে রাত্রিযাপন যদি তাদের মুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হয়, সেই মুক্ত চিন্তা আমার দেশ ধারণ করে না। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ এবং হিন্দু সমাজসহ আরও যতসব ধর্মের লোক রয়েছে, তারা কেউ এ রকম মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করে না। সব ধর্মের সহাবস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে। এ রকম অবাধ মেলামেশার মুক্ত চিন্তায় কোনো ধর্মের মানুষ অন্তত বাংলাদেশে বিশ্বাস করতে পারে না।
জাফর ইকবাল সাহেব বলেছেন, আমার দেশ মিথ্যা প্ররোচনা দিয়েছে। এজন্য আমার দেশ সম্পাদককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু আমার দেশ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে সামনাসামনি বসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শাহবাগে জড়ো হওয়া ব্লগারদের ব্লগ থেকে যেসব বিষয় আমার দেশ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে, সেগুলো মাহমুদুর রহমান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। কই জাফর ইকবাল সাহেব এত বড় কম্পিউটার বিজ্ঞানী মাহমুদুর রহমানের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আসলেন না কেন? তখন চুপসে ছিলেন কেন? কোন নিরপেক্ষ জায়গায় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে সামনাসামনি বসে সেটা প্রমাণ করতে পারতেন। সেই হিম্মত তো কারও হয়নি। উল্টা যুক্তির ভাষা ত্যাগ করে অস্ত্র দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
ড. জাফর ইকবাল তার আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সেটা হলো ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সময় শিক্ষকদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ। জরুরি অবস্থার সরকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নেতাকে গ্রেফতার করেছিল। জাফর ইকবাল সাহেব, জরুরি অবস্থার সরকারের উদ্যোক্তা কিন্তু আপনারাই ছিলেন। আপনাদের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে জরুরি অবস্থার সরকার। আপনার নেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রকাশ্যে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তার আন্দোলনের ফসল ১/১১-এর জরুরি আইন। শুধু তা-ই নয়, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাহেবও দাবি করেছিলেন জরুরি অবস্থার সরকার হচ্ছে তার আন্দোলনের ফসল। জরুরি অবস্থার সরকার কার আন্দোলনের ফসল, এটা নিয়েও কিন্তু আমরা আপনাদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা দেখেছি। আপনার চিন্তা-চেতনার মুক্ত চিন্তার ধারক ও বাহক হচ্ছে ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সুতরাং আপনাদের মুক্ত চিন্তা কাদের বিরুদ্ধে, সেটা কিন্তু জাতির সামনে স্পষ্ট।
হেফাজতে ইসলামের ৫ মে অবস্থান কর্মসূচিতে গণহত্যার প্রসঙ্গেও তিনি লেখায় ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন। অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে মিথ্যাচারের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার লেখাটিতে। এ প্রসঙ্গে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে ১৫ সম্পাদকের বিবৃতিতে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে তার লেখায়। তিনি বলতে চেয়েছেন, অধিকারের পক্ষে আরও বড় কেউ বিবৃতি দিলে হতাশ হওয়ার কিছু থাকবে না। এত দিনে তিনি নিশ্চয়ই দেখেছেন জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সবাই সরকারের সমালোচনা করে আদিলুর রহমান খানকে মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে। এসব দেখে তার হার্টবিট আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। কারণ তার প্রভুরা আদিলুর রহমান খানের মুক্তি চেয়েছেন।
তিনি লেখাটির শেষ পর্যায়ে এসে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চেয়েছেন, হেফাজতের সমাবেশে রাতের আঁধারে কোনো গণহত্যা হয়নি। ৫ মে রাতে মতিঝিলে গণহত্যার ঘটনা কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ-এর প্রেস আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই রাতে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনকে বন্ধ করা হয়েছে। সুতরাং মিডিয়া যা ছিল সবই হলো তার মুক্ত চিন্তার ধারক ও বাহক। তিনি হাজার হাজার নিহত হওয়ার ঘটনা লোকমুখে প্রচারিত হওয়ার কথা উল্লেক করেছেন। কিন্তু কোরআন শরিফ পুড়িয়ে দেয়ার প্রচারণা না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন। কোরআন শরিফ তো আওয়ামী লীগের লোকরা পুড়িয়েছে। সেটা তো আর মুক্ত চিন্তার গণমাধ্যমগুলো প্রচার করবে না।
অধিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয় নিয়েও উপহাস করা হয়ে তার লেখায়। অধিকার যেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, সেটা তাদের চলমান অনুসন্ধানের একটি অংশমাত্র। তিনি বলতে চেয়েছেন, অধিকার মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে বিভ্রান্ত করছে বলেই প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অধিকার সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল, বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করলে নাম-ঠিকানা জমা দেবে। কেন সরকারের কাছে নাম-ঠিকানা দিচ্ছে না, সেটাও অধিকার জানিয়ে দিয়েছিল। মতিঝিলে গণহত্যার বিষয়ে হেফাজতে ইসলামও একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারাও সংগ্রহ করেছে সেই রাতে গণহত্যায় নিহতদের নাম-ঠিকানা। একদিন এই গণহত্যার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে। জাফর ইকবালদের মুক্তচিন্তার বাইরে যারা থাকবেন, তাদের গণহত্যা করা কোনো অপরাধ নয়। কারণ তারা তো আর মুক্ত চিন্তার মানুষ নয়, তারা হলো অমানুষ। তার চিন্তা-চেতনা ধারণ করে যারা কথা বলবেন, শুধু সেটাই বাকস্বাধীনতা। আর তাদের চিন্তা-চেতনার বাইরে হলে সেটা বাকস্বাধীনতার আওতায় পড়ে না।
জাফর ইকবাল সাহেবদের জানা উচিত, ৫ মে মতিঝিলে যারা এসেছিল তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তারা এদেশের মাটি ও মানুষের অংশ। শাহবাগে জড়ো হওয়া মানুষরা যেমন এদেশের জনতার অংশ, মতিঝিলে জড়ো হওয়া মানুষরাও জনতার অংশ। বরং শাহবাগে তাদের প্রভুদের টাকায় বিরিয়ানি খাইয়ে, নারী-পুরুষের একসঙ্গে আনন্দ-ফুর্তি করার সুযোগ করে দিয়ে জড়ো করা হয়েছিল। আর মতিঝিলে যারা এসেছিল, তারা স্বতঃস্ফূর্ত এসেছে। সুতরাং মতিঝিলে গণহত্যার বিচার একদিন হবে। প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বের হবে এবং জড়িতদের শাস্তি হবে। সে পর্যন্ত জাফর ইকবালরা বেঁচে থাকুক, সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত

Friday 16 August 2013

অধিকারের ময়নাতদন্ত

সাজেদুল হক: অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুরই ভাল  জানবার কথা। যেহেতু তাদের দুই জনেরই আদর্শিক পথ একসময় এক ছিল। অধিকারের কণ্ঠ আর জামায়াত-হেফাজতের কণ্ঠকে এক বলেই ঠাওর করেছেন মাননীয় মন্ত্রী। যদিও শুক্রবারের মানবজমিনের অনলাইন সংস্করণে মিজানুর রহমান নামে এক পাঠকের মন্তব্য কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি লিখেছেন, আজকে যারা আদিলুর রহমান খানের কণ্ঠে জামায়াত-হেফাজতের আওয়াজ পান কয়েকদিন পরে তাদের কণ্ঠ আর আদিলুরের কণ্ঠ এক কণ্ঠে মিলে যেতে পারে। আদতে আদিলুরের কণ্ঠ হলো মজলুমের কণ্ঠস্বর। আদতে অধিকারের কণ্ঠ কার পক্ষে সোচ্চার? বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কি ভূমিকা ছিল অধিকারের? মানবাধিকার সংগঠনটির যাত্রা শুরু অবশ্য এরও আগে ১৯৯৪ সালে। শুরু থেকেই নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার  ছিল সংগঠনটি। ২০০৩ সালে অধিকারের বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করলেই ‘বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে’ সংস্থাটির কথিত ভূমিকা 
স্পষ্ট হবে। তখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অনেকে বাহবা দিচ্ছিলেন। অথচ সেই সময়ও অধিকার তীব্র এবং তীক্ষ্ন বাসায় সমালোচনা করেছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। ২০০৩ সালে অধিকারের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোট ৮১ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ৫, এপ্রিলে ৯, মে’তে ৪, জুনে ৭, জুলাইয়ে ৬, আগস্টে ৭, সেপ্টেম্বরে ১২, অক্টোবরে ৯ এবং ডিসেম্বরে ৭ জন। ৫৪ ধারায় অনেক গরিব এবং নিরপরাধ মানুষের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর আগে ২০০১ সালে যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে সে নির্বাচনে সংঘটিত সহিংসতার বিবরণও প্রকাশ করে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ীই ওই নির্বাচনে সহিংসতায় ৫২ জন নিহত হন।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ট্রাম্পকার্ডকালীন সময়েও অধিকারের ভূমিকা আমরা পরীক্ষা করবো। ২০০৪ সালের ৩০শে এপ্রিল সরকার পতনের ডেডলাইন ঘোষণা করেছিলেন আবদুল জলিল। সে সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। অতিউৎসাহী আর ‘সফল’ ভূমিকা তৎকালীন সরকারে তার প্রভাবও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার নির্দেশে সেসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। অধিকারই সে সময় সাড়ে আট হাজার লোক গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করেছিল। সরকারবিরোধী প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার ছিল সেই রিপোর্ট। অধিকারের ২০০৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সে বছর র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ৭৯ জন, পুলশের হাতে ১২৮ জন নিহত হয়। ওই বছর ৫ জন সাংবাদিক হত্যা আর ১১১ জন নির্যাতিত হওয়ার বিবরণও সে রিপোর্টে রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মানবাধিকার নিয়ে নিয়মিতই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে অধিকার। বিএনপির শাসনামল, ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান সরকারের আমলে এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বেগম খালেদার জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ২০০৭-০৮ সালে ক্ষমতায় ছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর ২০০৯ সালের শুরু থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৯৪৮ জন। আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৬৫৬, ২০০২ সালে ৪২০, ২০০৩ সালে ৪৩৬, ২০০৪ সালে ৫২৬, ২০০৫ সালে ৩১০, ২০০৬ সালে ৩৭৪, ২০০৭ সালে ৭৯, ২০০৮ সালে ৫০, ২০০৯ সালে ২৫১, ২০১০ সালে ২২০, ২০১১ সালে ১৩৫, ২০১২ সালে ১৬৯ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩২২ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২১৫১ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৪৪, ২০০২ সালে ৮৩, ২০০৩ সালে ৮১, ২০০৪ সালে ২৪০, ২০০৫ সালে ৩৯৬, ২০০৬ সালে ৩৫৫, ২০০৭ সালে ১৮৪, ২০০৮ সালে ১৪৯, ২০০৯ সালে ১৫৪, ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে ২০০১ থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯৭ জন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৮, ২০০২ সালে ৫০, ২০০৩ সালে ২৫, ২০০৪ সালে ৪৬, ২০০৫ সালে ২৬, ২০০৬ সালে ২৭, ২০০৭ সালে ৩০, ২০০৮ সালে ১২, ২০০৯ সালে ২১, ২০১০ সালে ২২, ২০১১ সালে ১৭, ২০১২ সালে ৭ এবং ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছেন।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ বছরে মোট ২৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ২, ২০০২ সালে ৩, ২০০৪ সালে ৫, ২০০৫ সালে ২, ২০০৬ সালে ১, ২০০৯ সালে ৩, ২০১০ সালে ৪, ২০১২ সালে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
শেষ কথা: আদতে স্থান, কাল ভিন্ন হলেও মানবাধিকারের সংজ্ঞা অভিন্ন। যুদ্ধ অথবা শান্তি সবসময় একই ভাষায় কথা বলে মানবাধিকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষাও এক। আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক সবসময়ই অধিকারের ভাষাও কি অভিন্ন নয়?

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি : গোলাম আযমের বিচার অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিচারপতিরা পক্ষপাতদুষ্ট

নিউইয়র্কভিত্তিক বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ (ডিপলি ফ্লড) এবং বিচারে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়নি।
গতকাল সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বিচারপতিরা ছিলেন পক্ষপাতদুষ্ট। বিচারপতিরা অন্যায়ভাবে প্রসিকিউশনের হয়ে তদন্ত করেছেন এবং রায়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘১৯৭১ সালে সংঘটিত নির্মমতার বিচার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তবে অর্থপূর্ণ বিচার করতে হলে তা হতে হবে স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক
মান অনুযায়ী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে (যুদ্ধাপরাধের বিচারের) আইন ও বিচার প্রকিয়া ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান দেয়নি। সরকার যে রায় চেয়েছিল তারা তা-ই পেয়েছে। কিন্তু তারা স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। গোলাম আযমের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি।’
হত্যা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, অপরাধে সহায়তা ও উসকানির অভিযোগে গত ১৫ জুলাই গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালত বলেছে, বয়সের বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। তবে তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, এইচআরডব্লিউ গোলাম আযমের রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কারণ—১. প্রসিকিউশনের পক্ষ হয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেছেন (ট্রাইব্যুনালের) বিচারপতিরা; ২. প্রসিকিউটর ও বিচারপতিদের মধ্যে পক্ষপাত ও অশুভ আঁতাত ছিল; ৩. অভিযুক্তদের সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ছিল; ৪. বিচাররক প্যানেলে পরিবর্তন, এবং ৫. সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থতা।
বিবৃতিতে বলা হয়, সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা হলো বিচারপতিরা বলেছেন প্রসিকিউশন পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তারা নিজেরাই তদন্ত কাজ চালিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারপতিদের ক্ষমতা হলো তাদের সামনে মামলার বাদী ও বিবাদীরা যেসব প্রমাণাদি হাজির করেন তার ভিত্তিতে বিচারকার্য পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতিরা যে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেছেন সে সম্পর্কে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা অবহিত না থাকায় তারা বিচারপতিদের প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে কিংবা একে চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। এ তদন্ত আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে বিচারপতিদের পক্ষপাত নিয়ে যেসব অভিযোগ ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টে ছাপা হয়েছে সেসব অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। স্কাইপ সংলাপে (আদালতের) বাইরের একজন পরামর্শকের সঙ্গে বিচার বিভাগ, প্রসিকিউশন ও নির্বাহী বিভাগের শলা-পরামর্শের বিষয়টি ফাঁস করে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে স্কাইপ কেলেঙ্কারির কাহিনী প্রথম প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট। এরপর আমার দেশ সংলাপের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করলে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে দেখা যায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বেলজিয়াম প্রবাসী ঘাদানিক নেতা আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এমনকি বিচার শেষ হওয়ার আগেই রায় নিয়েও তাদের মধ্যে ই-মেইল লেনদেন হয়। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন নিজামুল হক।
তবে সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১১ এপ্রিল আমার দেশ-এর মজুলম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার এবং বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিকটির প্রকাশনা।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্কাইপ সংলাপের অনেকাংশ জুড়ে ছিল গোলাম আযমের বিষয়টি। দেখা যায় বিচারপতিরা নীলনকশা করছে যে কিভাবে বিচার পরিচালনা করা হবে, কোনো সাক্ষীকে ডাকা হবে এবং তাদের কী প্রশ্ন করা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্কাইপ সংলাপে স্পষ্ট যে গোলাম আযমের মামলার বিষয়ে বিচারপতিদের নিবিড়ভাবে পরামর্শ এবং নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গোলাম আযমসহ অভিযুক্তদের পক্ষের সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় এবং তাদের আইনজীবীদের চেম্বারে হানা দেয়া হয়। অভিযুক্তদের সাক্ষীরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিষয়টির তদন্ত কিংবা তাদের নিরাপত্তার জন্য কোনো বাস্তবভিত্তিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
বিবৃতিতে ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘গোলাম আযমের বিচার নিয়ে সমস্যা বহুমুখী এবং এর ফলে অবশ্যম্ভাবীভাবে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, বিচারপতিরা ছিলেন ভীষণভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং এতে যথাযথ প্রক্রিয়ার গুরুতর লঙ্ঘন ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ন্যায় ও স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমেই কেবল ভিকটিম ও তাদের পরিবারের উপযুক্ত জবাব দেয়া সম্ভব।’
প্রভাবশালী এই মানবাধিকার সংগঠনটির এ বিবৃতি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও তার বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতার ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগেই বিশ্বের প্রায় সব মানবাধিকার সংগঠন এবং প্রভাবশালী গণমাধ্যম ট্রাইব্যুনালকে ‘বিতর্কিত’ বলে মন্তব্য করে আসছে। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গঠিত হলেও বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালকে স্বীকৃতি দেয়নি এ বিশ্বসংস্থাটি। উপরন্তু বিভিন্ন সময় বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে কড়া সমালোচনা করেছে তারা।

উইং কমান্ডার (অব.) সালাউদ্দিনের বর্ণনায় ১/১১ ও বিডিআর বিদ্রোহ

17 Aug, 2013
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরী নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত ‘ঠিকানা’কে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাত্কারে ১/১১ ও বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে নানা অজানা তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তত্কালীন সেনাপ্রধান জে. মইন ইউ আহমেদ পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জে. পারভেজ মোশাররফের মতো বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন। সাক্ষাত্কারে বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের সহকারী একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত এই উইং কমান্ডার আরও বলেছেন, ‘আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছি। আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি। পিলখানার ঘটনার পর আমি ২০০৯ সালের জুনে আবেদন করেছিলাম। পিলখানায় আমাদের এতগুলো অফিসারকে অসহায়ের মতো মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি, কেউ তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। আমি তো ঘটনাটা দেখেছি, মনিটর করেছি কীভাবে তিলে তিলে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। চাকরিতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল ছিলাম এবং আবেদনের আড়াই বছর পর আমি অবসরে যেতে পেরেছি।’ নিউইয়র্কে বসবাসরত উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরীর সাক্ষাত্কারটির উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে উপস্থাপন করা হলো :
ঠিকানা : সাভারের রানা প্লাজার ঘটনায় রেশমার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
সালাউদ্দিন চৌধুরী : রেশমার ঘটনাটি পুরোটাই ধোঁকাবাজি। লন্ডনের মিরর এবং দেশের কিছু পত্রিকা রেশমার ঘটনাটিকে যে সাজানো নাটক বলেছে, এটা সত্য। সাভারের রানা প্লাজায় যেদিন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, সেদিনই রেশমাকে উদ্ধার করা হয়। তাকে নিয়ে তো নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৭ দিন পর তার উদ্ধার, তার পোশাক এবং অন্যান্য বিষয় সন্দেহমুক্ত নয়। এখন আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে সরকার। আর সেগুলো হচ্ছে, রেশমাকে কেন চারটি সিকিউরিটি দেয়া হয়েছে? সাংবাদিকদের সঙ্গে কেন কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না? তাকে কেন ওয়েস্টিন হোটেলে জব দেয়া হয়েছে?
ঠিকানা : ১/১১ ঘটনার কারণটা কী ছিল?
সালাউদ্দিন : বিগত বিএনপি সরকারের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো ছিল। সেই ভুলভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে তত্কালীন সেনাপ্রধান তার উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করল, তার আগে থেকেই আমাদের দেশের সুশীল সমাজের কিছু সদস্য এবং কিছু বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি শব্দ বার বার উচ্চারণ করল, আর সেটি হলো তৃতীয় শক্তি। একজন সামরিক অফিসার হিসেবে আমি ব্যথিত হতাম এজন্য যে, তৃতীয় শক্তি বলতে উনারা জেনেশুনে বোঝাতে চাচ্ছেন আসলে তৃতীয় শক্তিটা কী? বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে রাতারাতি কোনো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারে না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সে যা-ই হোক, আমি তখন বিমান বাহিনীর প্রধানের এপিএস হিসেবে কর্মরত ছিলাম। কাছে থেকে অনেক কিছু ফিসফাস শুনতাম। সন্দেহ হতো, যেহেতু সেনাপ্রধানের উচ্চাভিলাষী একটা স্বপ্ন ছিল, যেটা তার কলিগদের মধ্যে অনেকেই জানতেন। আপনারা হয়তো জানেন যে, সেনাবাহিনী যদি কোনো অভ্যুত্থান ঘটাতে যায় বা কিছু করতে যায়, তাহলে তার মূল সাপোর্ট আসতে হবে নবম পদাতিক ডিভিশন থেকে, যেটা সাভারে অবস্থিত। সাভারের জিওসি ছিলেন তত্কালীন মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী। উনি বেগম খালেদা জিয়ার নিকটআত্মীয়। উনার দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের সন্দেহগুলোকে খুব একটা আমলে নিতাম না। কারণ উনি তো বেগম জিয়ার নিকটআত্মীয়। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ৮ জানুয়ারি ২০০৭ সালে বিমান বাহিনী প্রধানের বাসভবনের স্টাডি রুমের টেবিলে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের লেখা ‘ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার’ বইটি দেখে আমি এয়ার চিফকে জিজ্ঞেস করি—স্যার বইটি পড়েছেন? কেমন লেখা? উনি বললেন, কিছুটা পড়েছি। আর্মি চিফ জেনারেল মইন পাঠিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন পড়ার জন্য। বাইরে নানান গুজব শোনা যাচ্ছে, তাহলে কি উনি জেনারেল পারভেজ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্যার? আমার প্রশ্ন ছিল। তিনি প্রতিউত্তরে বললেন, ‘এমন স্বপ্ন দেখা তার জন্য (জেনারেল মইন) মারাত্মক ভুল হবে। কারণ এটা বাংলাদেশ। তাছাড়া এমন পরিকল্পনা থাকলেও সেটা আমার সামনে কখনো প্রকাশ করবেন না। এছাড়া নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর সাপোর্ট তিনি পাবেন না এবং আমার তো নয়ই। তবে এসব চিন্তা করা বা আলোচনা করা ঠিক নয়।’ তবু আমার ভেতর একটা শঙ্কা কেন জানি উঁকিঝুঁকি মারতো প্রায়ই।
ঠিকানা : বিমান বাহিনীর প্রধান তখন কে ছিলেন?
সালাউদ্দিন : বিমান বাহিনী প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম। আমি ভাবতে লাগলাম, দেয়ার মাস্ট বি সামথিং রং। সামরিক অফিসার হিসেবে আমি চিন্তা করলাম, বাংলাদেশের গণতন্ত্র খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটলেও একটা গণতন্ত্র আছে। সেটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় কোনো সামরিক অফিসারের উচ্চাভিলাষী অভিলাষের জন্য। আমি আমার মাথা থেকে এই দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছি বার বার মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে। কেননা তার প্রতি অবিচল আস্থা ছিল বিএনপি সরকারের। ঘটনাটি যখন ঘটল, তখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমি নিশ্চিত হলাম, ১/১১-র পেছনে আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থন ছিল। আমরা যদি বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করি, দেখব যতবারই সেনা অভ্যুত্থান বা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ হয়েছে, ততবারই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছিল। রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া সেনা অভ্যুত্থান করা সম্ভব নয়। আমার চোখে দেখা ১/১১ ঘটার পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হলো তিনি যেন কিছুদিন দেশের বাইরে থাকেন। বিএনপির যেসব কার্যক্রমে মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার পরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে একটি নির্বাচন দেয়া। এই বক্তব্যটি আমি কীভাবে জানলাম—বিমান বাহিনী প্রধান আমাকে বললেন, সেনাপ্রধান উনাকে বলেছেন, তারা ভোটার আইডি কার্ড করবেন, পরিবেশ তৈরি করে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যেটা প্রথমে বিশ্বাসযোগ্য ছিল কিন্তু পরে সেনাপ্রধানের কর্মকাণ্ডে তার কথার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ইতোমধ্যে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিমান বাহিনী প্রধান এভিএম ফখরুল আজম অবসরে গেলে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন যেন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কেননা উনি সেনাপ্রধানের অনেক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেন।
সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের কর্মকাণ্ডে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল, পাকিস্তানের সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফের মতো তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। পারভেজ মোশাররফ কিন্তু সেই দেশের বিরোধী দলের নেতা নওয়াজ শরীফকে প্রথমে আটক ও পরে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সেনাসমর্থিত সরকারের কথামত দেশ ছাড়লেন। তখন কথা উঠল বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও দেশ ছাড়তে হবে। বেগম জিয়া কোনোভাবেই বিদেশে যেতে চাইলেন না। তিনি দেশত্যাগে রাজি হননি। এখানে একটি কথা বলে রাখি, সেনাপ্রধানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যারা সহযোগী হিসেবে ছিলেন, তাদের দু-একজন বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে একটা আপসহীনতা কাজ করে, তাই উনাকে কি দেশত্যাগে বাধ্য করানো সম্ভব হবে? ওখানে যারা ছিলেন—জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারীসহ অনেকেই বলেছিলেন, বিএনপি এখন মনোবলের দিক থেকে দুর্বল তাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের কারণে। সুতরাং তাকে দেশত্যাগ করানো অসম্ভব কিছু নয়। তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে। আলটিমেটলি হয়নি। এভাবে রাজি করাতে না পেরে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং বেগম জিয়াকে নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এর পরেও বেগম খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল। মাঝে-মধ্যে নিমরাজি ছিলেন, আবার মনের দিক থেকে তিনি মোটেও রাজি ছিলেন না। সোজা কথা, তিনি দেশত্যাগ করবেন না। তিনি বার বার বলতেন, বিদেশে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই, ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। বেগম খালেদা জিয়ার এই দৃঢ় মনোভাব উচ্চাভিলাষী সেনাপ্রধানের সমর্থনকারীদের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১/১১ যেদিন হলো, সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে আমার বিমান বাহিনীর প্রধান তার বাসায় ডেকে পাঠালেন। তার বাসায় যে অফিস, সেখানে বসে আমরা কথা বলছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম—স্যার, এটা কি ঠিক হলো? উনি প্রতিউত্তরে আমাকে বলেছিলেন, জাস্ট প্রে ফর দ্যা নেশন। তার একটু পরেই দেখলাম তার বাসার রেড টেলিফোন বাজলো। তিনি ফোন ধরলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান ফোন করেছেন। সেনাপ্রধান উনাকে বলছেন, স্যার আপনি একটু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন। উনাকে বলেন, উনি যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। বিমান বাহিনীর প্রধান সেনাপ্রধানকে বললেন, ঠিক আছে আমি ফোন করব। উনি ফোন রেখেই বললেন, ড. ইউনূসের ফোন নম্বর তার জানা নেই। আমি তখন উনার বাসার যে রিসিপশনিস্ট, তাকে বললাম ড. ইউনূসের ফোন নম্বর জোগাড় করে দেয়ার জন্য। আমি নম্বর নিয়ে ড. ইউনূসকে কল করলাম। উনি সরাসরি ফোন ধরলেন। আমি ফোনটি বিমান বাহিনীর প্রধানকে দিলাম। বিমান বাহিনীর প্রধান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাকে দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেন। আমি তখন কায়মনোবাক্যে চাচ্ছিলাম যে ড. ইউনূস যেন রাজি হন। কারণ উনার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন, তাহলে সেনাপ্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা বাধাগ্রস্ত হবে এবং রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ড. ইউনূস বিমান বাহিনীর প্রধানকে বললেন—এয়ার চিফ, এভাবে তো দায়িত্ব নিয়ে কিছুই করা যাবে না। দেশকে যদি সুন্দর বাংলাদেশ করতে হয়, তাহলে সময়ের প্রয়োজন। আমি এই অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে চাই না, কিছু করা যাবে না। সুতরাং দায়িত্ব নেয়া আমার জন্য ঠিক হবে না। উনি সেনাপ্রধানকে বিষয়টি জানালেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে আমি যথারীতি সকাল বেলায় অফিসে গেলাম। বিমান বাহিনীর প্রধান আমাকে বললেন, আর্মি চিফ আমাকে কফি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, সেনাপ্রধানের অফিসে একজন মেহমান এসেছেন, তাই তিনি আমাকে কিছুক্ষণ পরে যেতে বলেছেন। এরপর তিনি ১০ থেকে ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে সেনাপ্রধানের অফিসে কফির দাওয়াত রক্ষার জন্য গেলেন। উনি যাওয়ার পরে সেনাপ্রধান বললেন, বিদেশি মেহমান এসেছেন। সেনাপ্রধান বেশ উত্তেজিত। এয়ার চিফ বললেন, কী হয়েছে? তখন সেনাপ্রধান বললেন, স্যার এভাবে দেশ চলতে পারে না, এভাবে সম্ভব নয়। এই দেখুন জাতিসংঘের চিঠি। এয়ার চিফ জিজ্ঞেস করলেন—কে দিয়ে গেছেন। সেনাপ্রধান বললেন, বাংলাদেশে ইউএনডিপির স্থায়ী প্রতিনিধি মিস রেনেটা। ওই চিঠির কপি আমি নিজ চোখে দেখেছি। দেখে আমার কাছে মনে হলো, চিঠিটা অথেনটিক নয়। আমি রংও হতে পারি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে জাতিসংঘ থেকে এ ধরনের ভাষার চিঠি প্রেরণ করা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ঠিকানা : চিঠির বিষয়বস্তু কী ছিল?
সালাউদ্দিন : চিঠির বিষয়বস্তু ছিল, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তোমরা যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নাও, তাহলে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সব সৈনিককে ফেরত পাঠানো হবে। আমার কাছে মনে হলো, এটা জাতিসংঘের সদর দফতরের ল্যাঙ্গুয়েজ হতে পারে না। সেনাপ্রধান যখন রেগেমেগে কথা বলছিলেন, তখন বিমান বাহিনীর প্রধান জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আপনি কী করতে চাচ্ছেন? সঙ্গে সঙ্গেই জেনারেল মইন বললেন—স্যার, আপনাকে বঙ্গভবন যেতে হবে। বিমান বাাহনীর প্রধান বললেন, আমরা তো এভাবে বঙ্গভবনে যেতে পারি না, রাষ্ট্রপতি কল করলে আমরা যেতে পারি। একথার পরপরই সেনাপ্রধান বললেন, স্যার আপনাকে কল করবেন। কফি পর্ব শেষে এয়ার চিফ বিমান বাহিনী ঘাঁটি কুর্মিটোলা পরিদর্শনে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তত্কালীন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আমিনুল করিম বিমান বাহিনী প্রধানকে ফোন করলেন। তিনি বললেন, ‘স্যার, আপনাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসতে বলেছেন।’ বিমান বাহিনীর প্রধান নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল হাসান আলীকে তখন ফোন করলেন এবং বঙ্গভবনে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন কি-না তা জিজ্ঞেস করলেন। জনাব হাসান জানালেন—স্যার, আমিও এইমাত্র খবর পেয়েছি, আমিও যাচ্ছি বঙ্গভবনে। বিমান এবং নৌবাহিনীর প্রধান বঙ্গভবনে রওনা দিলেন। তারা গিয়ে দেখেন, এরই মধ্যে বঙ্গভবন অকোপাইড। ওখানে ডিজিএফআইর ডিজি জেনারেল রুমির পরিবর্তে (তিনি তখন ইংল্যান্ডে), ব্রিগেডিয়ার বারী, সেনাপ্রধান লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (পিএসও এফডি)। সেখানে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিকে উদ্দেশ করে সেনাপ্রধান উত্তেজিতভাবে বললেন—স্যার, এসব কী হচ্ছে? এভাবে হবে না, আপনি জরুরি অবস্থা জারি করুন। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য যে বক্তব্য দেয়ার কথা, সেই বক্তব্য লিখে নিয়ে যাওয়া হলো, তাও তিন কপি রেডি করে নিয়ে যাওয়া হয় তিন ধরনের। এর থেকে বোঝা যায় সেনাপ্রধানের এমন পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। তার এমন চিন্তা-চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই কানাঘুষা ছিল অনেকের মাঝেই কিন্তু কেউ তা আমলে নেননি। তার মূল কারণ ছিল মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা। রাষ্ট্রপতি প্রথমে বিমান বাহিনী প্রধানকে বললেন, আপনি কী বলেন? বিমান বাহিনীর প্রধান বললেন, আপনি দুই নেত্রীকে ডেকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমস্যার সমাধান করুন। রাষ্ট্রপতি বললেন, উনারা তো আমার কথা শোনেন না, একজন আমাকে বলেন (শেখ হাসিনা) ইয়েস উদ্দিন। তখন ব্রিগেডিয়ার বারী উত্তেজিত অবস্থায় বলতে থাকলেন—স্যার, এভাবে চলতে পারে না।
ঠিকানা : সেনাপ্রধান মইন এবং বারী কেন উত্তেজিত ছিলেন?
সালাউদ্দিন : এটা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত নাটক। সেনাপ্রধান ওই সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীকে ধমক দিয়ে বলেন, বারী বসো। বারী সরি বললেন। ডিজিএফআই’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে বারী কথাবার্তা বলছিলেন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সবার উদ্দেশে বললেন, আমাকে একটু সময় দিন, আমি ভেতর থেকে একটু আসি। সেনাপ্রধান এর জবাবে বললেন, স্যার আপনি কোথাও যেতে পারবেন না, যা সিদ্ধান্ত নেবেন আপনাকে এখানে বসেই নিতে হবে। তাহলে আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে একটু কথা বলে আসি? সেনাপ্রধান আবারও বললেন, যা সিদ্ধান্ত নেয়ার আপনাকে এখনই নিতে হবে। ম্যাডামের সঙ্গে আপনি পরে কথা বলতে পারবেন। তিন বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে ইয়াজউদ্দিনকে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না, কেন দেয়া হলো না? রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তের আগে আরেকটি ঘটনা ঘটল, যেটি ছিল হাস্যকর। জেনারেল মাসুদ অনেকটাই বঙ্গভবনের কাছে চলে এসেছিলেন। জেনারেল মইন জানতেন উনি এখনও বঙ্গভবনের পাশেই আছেন। তিনি জেনারেল মাসুদকে ফোন করে বললেন—মাসুদ, তুমি সবকিছু রেডি কর। এয়ার চিফ তখন বললেন, মইন রিলাক্সড, এভাবে থ্রেট দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। রাষ্ট্রপতিকে ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জেনারেল মইনের অভিনয়।
ঠিকানা : আপনি কি ওই সময় চিফের সঙ্গে ছিলেন?
সালাউদ্দিন : না, ওই সময় আমি চিফের সঙ্গে ছিলাম না, আমি উনাকে সিঅফ এবং রিসিভ করেছিলাম এয়ার হাউজে। চিফ নিজেই আমাকে এ কথাগুলো বলেছেন। এ ঘটনায় এয়ার চিফ নিজেও একটু দুঃখ পেয়েছেন। কারণ তিনি ছিলেন বিএনপি সরকার কর্তৃক মনোনীত চিফ। অবশ্য সব চিফই ছিলেন বিএনপি মনোনীত।
ঠিকানা : জেনারেল মইনও ছিলেন বিএনপি মনোনীত?
সালাউদ্দিন : জেনারেল মইনের ছিল ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। জেনারেল মইন বাংলাদেশে পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফ হতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানে পারভেজ মোশাররফ যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, জেনারেল মইনও বাংলাদেশে সেইভাবে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। তিনি কিং অব বাংলাদেশ হতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে জেনারেল মাসুদের ওপর আমাদের একটা আস্থা ছিল, অন্য কিছু নাও হতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকেই জেনারেল মাসুদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতেন। তিনি রক্ষীবাহিনীর লোক ছিলেন।
ঠিকানা : কীভাবে বুঝলেন?
সালাউদ্দিন : ভুয়া চিঠি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করা, রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারিতে বাধ্য করা এবং ক্ষমতায় এসে কিংস পার্টি গঠনের অপারেশন, বিভিন্ন পার্টি থেকে জোর করে নেতাদের চোখ বেঁধে এনে হুমকি দেয়া এবং বিভিন্ন পার্টি ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করা। এগুলোর ভিডিও তো এখন সর্বত্রই রয়েছে। আমরা দেখেছি। ২০০৭ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে ঢাকার একটি জায়গায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী বৈঠকে বসেন। উদ্দেশ্য বিভিন্ন দলের নেতাদের একত্র করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা। সেই মিটিংয়ে বগুড়ার বিএনপিদলীয় এমপি ড. জিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার বারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সেখানে কিংস পার্টি করার কথা বলতেন। বলতেন কিংস পার্টিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। ড. জিয়া ব্রিগেডিয়ার বারীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই পার্টির প্রধান কে হবেন। এর জবাবে ব্রিগেডিয়ার বারী বলেছিলেন, সেনাপ্রধান হলে কোনো অসুবিধা আছে? তিনি ড. কোরেশীসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মিটিং করতেন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার লক্ষ্যে।
ঠিকানা : আপনি বলেছিলেন, সেনাপ্রধান এয়ার চিফকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। এর কারণ কী?
সালাউদ্দিন : বইটি এয়ার চিফকে পড়ার জন্য দেয়া হয়েছিল। বইটি পড়ার দু’দিন পর এয়ার চিফ আমাকে বললেন, সেনাপ্রধান আমাকে এটা কেন দিলেন? আমি জবাব দিলাম, স্যার আমি তো বুঝতে পারছি না। এরপর এয়ার চিফ আমাকে বললেন, এটা পড়ে কি এর ওপর তিনি কিছু করবেন কি-না? আমি বললাম, স্যার এটা সন্দেহজনক।
ঠিকানা : সেনাপ্রধান মইন যেদিন বঙ্গভবনে গেলেন, সেদিন তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে ক্ষমতা দখল করবেন—সেটা কি বিমান এবং নৌবাহিনীর প্রধানরা জানতেন না বলে আপনি মনে করেন?
সালাউদ্দিন : না, কেউ জানতেন না। শুধু জানতেন সেনাপ্রধান ও তার কিছু সহযোগী।
ঠিকানা : রাষ্ট্রপতি যখন বাইরে যেতে চাইলেন কিন্তু সেনাপ্রধান যেতে দিলেন না, তাকে কি গুলি করার হুমকি দেয়া হয়েছিল?
সালাউদ্দিন : রাষ্ট্রপতিকে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়নি।
ঠিকানা : তাহলে রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে বসিয়ে রাখা হলো?
সালাউদ্দিন : রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি বলা হলো—স্যার, আপনি কোথায়ও যেতে পারবেন না। আপনাকে এখানেই ডিসিশন নিতে হবে। শুধু ফাও হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন—মাসুদ তুমি কোথায়, ট্যাংক-টুং সব ঠিক আছে কি-না? এটা ছিল সেনাপ্রধান মইনের নাটক। আমি শুনেছি, তিনটি পরিকল্পনা নিয়ে সেনাপ্রধান বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। এ ব্যর্থ হলে বি, বি ব্যর্থ হলে সি।
ঠিকানা : এ, বি, সি’টা কী কী?
সালাউদ্দিন : প্রথম পরিকল্পনা ছিল জরুরি অবস্থা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে বলা। তিনি জরুরি অবস্থা জারি করতে রাজি না হলে প্রেসার দিয়ে রাজি করানো, তাও কাজ না করলে এক্সট্রিমওয়েতে যাওয়া।
ঠিকানা : জেনারেল মাসুদ, ব্রিগেডিয়ার বারী—এদের নিয়ে সেনাপ্রধান এই কাজ করলেন কিন্তু এক সময় দেখা গেল, তাদেরকেই সরিয়ে দেয়া হলো? কারণ কী?
সালাউদ্দিন : এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো আর সেটি হলো, এই পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ড হচ্ছেন মেজর জেনারেল এ কে এম আমিন। তিনিই ছিলেন একাডেমিক্যালি জিনিয়াস আফিসার। ব্রিগেডিয়ার বারী ছিলেন ট্রিপিক্যাল ট্রু সোলজার। এত ব্রেনওয়ার্ক ছিল না। মূল প্লানটা ছিল মেজর জেনারেল এ টি এম আমিনের। জেনারেল মইন সরিয়েছিলেন জেনারেল মাসুদকে। মইন সাহেব সরে যাওয়ার পর মেজর জেনারেল আমিন এবং বারীরা নিজেরাই সরে গেলেন। জেনারেল মাসুদকে সরানোর কারণ হলো, পরে জেনারেল মইন মেজর জেনারেল মাসুদকে নিজের জন্য হুমকি মনে করতেন।
ঠিকানা : তারেক রহমানের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের কথা আমরা শুনি। আসলে তার ওপর কী ধরনের নির্যাতন হয়েছিল এবং যারা নির্যাতন করেছিল, তাদের কি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে?
সালাউদ্দিন : তারেক রহমানকে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতন চালানো হয়েছিল এবং সেই নির্যাতনে যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন, তাদের সম্পর্কে অনেকেই এখন জানেন। বিষয়টি প্রায় সবার কাছে খোলাসা হয়ে গেছে। তারেক সাহেবের ওপর নির্যাতন এতটা নেমে আসতো না, যদি বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যেতেন শেখ হাসিনার মতো। এখানে আমি একটি কথা বলে রাখতে চাই, জরুরি সরকারের পরে যে গণতন্ত্র (যেনতেন হলেও) এসেছে, সেটা এসেছে একটি নীলনকশার নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা ছিল একটি সাজানো নির্বাচন। বেগম খালেদা জিয়াকে তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য। তিনি তাদের কথা শোনেননি। তিনি জানতেন নির্বাচন হলে তার দল পরাজিত হবে। তারপরেও তিনি নির্বাচনে গেলেন যে কোনো ধরনের একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য। তার মূল লক্ষ্য ছিল মইন-ফখরুদ্দীনের অগণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সরকার এবং গণতন্ত্র ফিরে আসুক। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই সার্ভে রিপোর্ট আসে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় বিএনপি নির্বাচনে হারবে। ৯৫ থেকে ১০০টি আসন পেতে পারে। ওই সময় আওয়ামী লীগ এবং বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণে একটি সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতা বৈঠকে আওয়ামী লীগ পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, বিএনপিকে ৩০টির বেশি সিট দেয়া যাবে না। যারা ওই মিটিংয়ে ছিলেন, তারা এখনো আছেন—প্রমাণ করার জন্য তাদের ডেকে আনা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, সব বেরিয়ে আসবে। ১/১১-র কুশীলবরা এই সুযোগটি কাজে লাগান, তারা সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ নেতাদের শর্ত জুড়ে দেন। আর তা হলো, নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করলে তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান সুনিশ্চিত করতে হবে। এই সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছু বিদেশি কূটনীতিকের অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপিকে এত কমসংখ্যক আসনে বিজয়ী দেখানোর ইচ্ছে জাগ্রত হয় রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে। ১/১১-র কুশীলবরা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে সেইফ এক্সিটের যখন নিশ্চয়তা পেল একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে, তখন তারা দুই বছরের দীর্ঘ অবৈধ শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করল। বেগম জিয়ার সেক্রিফাইসের কারণেই আজ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার এবং তারেক রহমানের ওপর এত নির্যাতন হতো না, যদি বেগম জিয়া তাদের কথামত শেখ হাসিনার মতো বিদেশে চলে যেতেন। দেশে তাহলে হয়তো আজ অন্যরকম পরিস্থিতি বিরাজ করতো, যদি মাইনাস টু ফর্মুলা জেনারেল মইন বাস্তবায়ন করতে পারতেন।
ঠিকানা : ফখরুদ্দীন এবং মইনউদ্দিন ছিলেন বেগম জিয়ার পছন্দের লোক। ফখরুদ্দীনকে ওয়াশিংটন থেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করলেন, মইনকে কয়েকজনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান করলেন। তারা কেন এই কাজ করলেন?
সালাউদ্দিন : সেনাপ্রধান মইনের ছিল ক্ষমতার লোভ। সেনাপ্রধানের উচ্চাভিলাষকে পরিপূর্ণ করার জন্য অনেক এলিমেন্টস দাঁড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে সেনাপ্রধানের ভাই ভারতের অশোক লিল্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছেন, তারও একটা প্রভাব আছে। দুর্ভাগ্য হলো, সেনাপ্রধান ধরেই নিয়েছেন, তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। উনার চিন্তাধারার বাইরেও যে কিছু পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম হয়েছিল, সেটা বোঝার মতো মানসিক অবস্থানে তিনি ছিলেন না। উনার পরিকল্পনা ছিল ক্ষমতায় এসেই দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন, উনিই হবেন বাংলাদেশের কিং—এ পর্যায় পর্যন্ত এসে উনার চিন্তাধারা থেমে গেছে। শুধু বেগম জিয়ার আপসহীনতার কারণে, কঠিন ব্যক্তিত্বের কারণে জেনারেল মইনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া যে যোগ্যতায় এসব কাজে এগুনো দরকার, সেই কাজ করার মতো যোগ্যতা এবং পরিকল্পনা কোনোটাই জেনারেল মইনের ছিল না।
ঠিকানা : অশোক লিল্যান্ডের সঙ্গে উনার বড় ভাই ব্যবসা করতেই পারেন, এটার সঙ্গে ওটার সম্পর্ক কী?
সালাউদ্দিন : প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আরেকটি প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু ওই সময়ে আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক পিনাক রঞ্জনের সঙ্গে যে ধরনের মাখামাখি এবং যোগাযোগ দেখেছি, তা ছিল সন্দেহজনক। আরও অনেক কূটনীতিক ছিলেন। যেমন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ইউএসএ, কানাডাসহ আরও অনেক দেশের কূটনীতিকরা ছিলেন। প্রতিবেশী দেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে উনার যে যোগাযোগ ছিল এবং ইন্টারঅ্যাকশন হতো, তা ছিল দৃষ্টিকটু।
ঠিকানা : ১/১১-র আগে না পরে?
সালাউদ্দিন : আগে এবং পরেও।
ঠিকানা : ১/১১-র আগে হলে গোয়েন্দা সংস্থা তা জানতো না? সেনাপ্রধানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের হাইকমিশনারদের এই মাখামাখি তারা রিপোর্ট করেনি?
সালাউদ্দিন : তখন বিএনপি অলরেডি ক্ষমতা হস্তান্তর করে ফেলেছে। বিএনপির ক্ষমতা হস্তান্তরের পরপরই এটা চালু হয়েছে। এসব সাক্ষাত্কার সৌজন্য সাক্ষাত্কার ডিজিএফআই’র ক্লিয়ারেন্সে হতো, যা প্রচলিত রীতিনীতির মাধ্যমেই করা যেতো। ওই সময় পিনাক রঞ্জনের মুভমেন্ট এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছিল আই ক্যাচিং।
ঠিকানা : আমাদের দেশে আমরা দেখছি গোয়েন্দা সংস্থা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে এবং গরিব মানুষের অর্থে জীবিকা নির্বাহ করে জনগণের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছে, এর কারণ কী?
সালাউদ্দিন : একথার জবাবে বলা যায়, এগুলো অনৈতিক কাজ। একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে আমি এটা বলতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনৈতিক কাজগুলোই নৈতিক হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডিজিএফআই বলেন, আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ বলেন—সবাই যোগ্য এবং অত্যন্ত পারদর্শী স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে। যে কোনো ঘটনা ঘটলে তারা ইচ্ছে করলে বের করতে পারেন। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হয় না—এটাই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য।
ঠিকানা : বাংলাদেশে কি আবারও সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা আছে?
সালাউদ্দিন : বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো—যে সরকারই আসুক বাংলাদেশে, বিএনপি যেন না আসে। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা প্রমাণিত সত্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল না হলে আন্দোলন হবে, মারামারি হবে, জ্বালাও-পোড়াও হবে, খুনোখুনি হবে—বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এতে করে কী কিছু হলো? আওয়ামী লীগ চাচ্ছে অন্য কোনো শক্তি এসে আবার ইন্টারভেন করুক?
ঠিকানা : আওয়ামী লীগ সেইফ এক্সিট খুঁজছে?
সালাউদ্দিন : আওয়ামী লীগের সেইফ এক্সিট হবে কি-না, সে ব্যাপারে তারাও নিশ্চিত নয়। তারা মনে করছে, এটাই সেফ এক্সিট। এটা আমাদের জন্য আরেকটি দুর্ভাগ্য। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপির জন্ম দিয়েছে সামরিক বাহিনীর লোকজন। কিন্তু এটাও সত্য যে, ১৯৯১ সালের পর দেশে যখন গণতন্ত্র এলো, তখন বাংলাদেশের মানুষই বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। তার মানে কী? তার মানে হচ্ছে, বিএনপি জনগণের পার্টি এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
ঠিকানা : ১/১১-র সময় অনেক লোককে নির্যাতন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি?
সালাউদ্দিন : এক সময় না জানলেও এখন তো প্রায় সবকিছুই বেরিয়ে গেছে। এগুলোর অডিও-ভিডিও রয়েছে। সে সময় মানুষের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন তো অবশ্যই হয়েছে।
ঠিকানা : এটা কি ফেয়ার হয়েছে?
সালাউদ্দিন : না, ফেয়ার হয়নি। আইন অনুযায়ী কেউ করতে পারে না। ১/১১-র গোটা দুই বছর সেনাসদস্যদের যে বাইরে রাখা হয়েছে, এটার একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে। বিশেষ করে, ১৯৯০-এর পর থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিষ্ঠা, সততা ও পরিশ্রম দিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঈর্ষণীয় প্রশংসা অর্জন করেছে। ১/১১ সেই সুনাম, প্রশংসা ও ভাবমূর্তি বেশ ক্ষুণ্ন করেছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। কিছু কিছু সদস্য নিজেদের বহুলভাবে বিতর্কিত করেছেন।
ঠিকানা : রাজনীতিবিদরা অন্যায় করেছেন, অসত্ কাজ করেছেন, দুর্নীতি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১/১১ সেনা সরকার এলো—তারা কীভাবে দুর্নীতি করেন, অসত্ কাজ করেন?
সালাউদ্দিন : রাজনীতিবিদদের মধ্যে সত্-অসত্, ভালো-মন্দ থাকতে পারে। রাজনীতিবিদরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, অনেক সময় দেশের চেয়ে দল এবং ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখেন; কিন্তু যা কিছুই পরিবর্তন হবে দেশে, তা রাজনীতিবিদদের মাধ্যমেই হতে হবে। এতদিন বাংলাদেশে একটি সংস্থা বিতর্কিত ছিল না, ১/১১-র পরে সেই সংস্থা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। যৌক্তিক কারণেই বিতর্কিত হয়ে গেছে।
ঠিকানা : জেনারেল মইন যখন ক্ষমতা দখলসহ অন্যায় কাজ করছিলেন, অন্য দুজন নেভি এবং এয়ার চিফ তাকে সহযোগিতা করলেন কেন?
সালাউদ্দিন : বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিই হচ্ছেন সর্বাধিনায়ক, কমান্ডার ইন চিফ। তিনিই সবাইকে ডেকেছিলেন। জরুরি অবস্থা জারি করতে উনাকে যে বাধ্য করা হয়েছে, সেটা তো বাংলাদেশের জনগণ তখন জানতো না। বাধ্য হয়েই তিনি বলেছিলেন, আমি জরুরি অবস্থা জারি করলাম। উনি যদি বলেন, আমি জরুরি অবস্থা জারি করলাম তখন অন্যান্য চিফ তা মানতে বাধ্য। প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রপতি কি তাদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে ডেকেছিলেন? জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? এর জবাব হচ্ছে—নো। উনাকে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর প্রতি সপ্তাহেই সেনাসদরে পরিস্থিতির ওপর বৈঠক হতো, সেসব মিটিংয়ে আমার যাওয়ার সুযোগ হতো এয়ার চিফের সঙ্গে। দু-তিনটি মিটিংয়ে যাওয়ার পরে এয়ার চিফ সেনাপ্রধানকে ফোন করে বললেন, আপনি যা করছেন আমার তো এসবে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তখন সেনাপ্রধান এয়ার চিফকে বললেন, ঠিক আছে স্যার, আপনার আসার দরকার নেই। ওইসব মিটিংয়ে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো তা আমার কাছে অন্তঃসারশূন্য মনে হতো। শুধু একটি কথাই মনে হতো, যার কাজ তাকেই মানায়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের, আর কারও নয়। প্রথমত তার উদ্দেশ্য ছিল অসত্, দ্বিতীয়ত তার সেই যোগ্যতা, ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি ছিল না।
১/১১-র ঘটনার তিন মাস পরে তিনি অবসরে যান। এয়ার চিফ সেনাপ্রধান জেনারেল মইনকে বার বার বলেছিলেন—একটি ভোটার আইডি তৈরি করে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নিজ দায়িত্বে ফিরে যেতে। একটা সময় এয়ার চিফ বুঝলেন জেনারেল মইন তার উপদেশ আর নিতে ইচ্ছুক নন। একদিন সেনাপ্রধান বলেই ফেললেন—স্যার, আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। এয়ার চিফ তো চেষ্টা করেছেন। তিনি আর কী করতে পারেন? যুদ্ধ ঘোষণা করবেন?
ঠিকানা : জেনারেল মইন ফেল করলেন কেন?
সালাউদ্দিন : ফেল করার কারণ হলো, উনি যদি মেইন একটি বা দুটি সমস্যার ওপর ফোকাস করতেন, তাহলে ভালো করতেন। উনি একসঙ্গে এত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন যা তার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। দায়িত্বগুলোর মধ্যে ছিল সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ধরা, ট্রুথ কমিশন করে তার সামনে গিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের দিয়ে স্বীকার করানো আপনি চুরি করেছেন, সেটা আবার টিভিতে দেখানো হচ্ছে। এটা কি সভ্য সমাজে চলতে পারে? একটি বিশেষ সংস্থার লোকদের দিয়ে দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে একটি সত্ ও সভ্য জাতি গড়া রাতারাতি সম্ভব নয়। জেনারেল মইন তার অনুগত সদস্যদের দ্বারা বাংলাদেশে সত্ ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রকল্প গ্রহণ করেন, যা বাস্তবসম্মত ছিল না। একদিন বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা পরিচালক আমাকে বললেন, সালাউদ্দিন তোমার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যারা সত্ ব্যবসায়ী, তারা চাইলে একটি বিশেষ সংস্থা তাদের বিভিন্নভাবে প্রশাসনিক সহযোগিতা দিয়ে দেশে সত্ ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়াবে। আমি তাকে বললাম, স্যার পরিকল্পনাটি খুবই সুন্দর কিন্তু দ্রুত বাস্তবায়ন একেবারেই অসম্ভব।
ঠিকানা : পিলখানার ঘটনাটা কি পরিকল্পিত ঘটনা?
সালাউদ্দিন : পিলখানার ঘটনায় সৈনিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, তার দায়-দায়িত্ব মইন- ফখরুদ্দীন সরকারকে নিতে হবে। মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের হটকারী সিদ্ধান্তের কারণেই সৈনিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেভাবে সৈনিকরা ঘটালো, তা দমনে সব ব্যর্থতা হলো আওয়ামী লীগ সরকারের।
ঠিকানা : মইন-ফখরুদ্দীনের হটকারী সিদ্ধান্তটা কী?
সালাউদ্দিন : একজন বিডিআর সৈনিকের দায়িত্ব কী? বিডিআরের সৈনিকদের দিয়ে যখন মইন-ফখরুদ্দীন সরকার জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য জনগণকে সেবা দেয়ার নামে বিভিন্ন জায়গায় চাল-ডালের দোকান শুরু করল (অপারেশন ডাল-ভাত), তখন বিডিআর সৈনিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এ কাজগুলো করেছে। এ কাজগুলো করতে গিয়ে দেখলেন এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদেরই কিছু কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিছু কিছু কাজ করছেন, যেগুলো বিতর্কিত। যারা দিনরাত কষ্ট শিকার করে কাজ করছেন, তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তাছাড়া বিডিআর সৈনিকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা, জাতিসংঘ মিশনে নিয়োগ, নিজস্ব বাহিনীর কর্মকর্তা নিয়োগসহ কিছু দাবি- দাওয়া ছিল যা ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন এবং পরে আওয়ামী সরকার মোটেও আমলে নেয়নি। সেই ক্ষোভের যে নিষ্ঠুর-নির্মম বহিঃপ্রকাশ, সেটা প্রতিরোধে ব্যর্থতা এবং তার সব দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারের।
ঠিকানা : আপনার কি মনে হয়, যদি মিলিটারি অ্যাকশনে যেত তাহলে এত ম্যাসাকার হতো না?
সালাউদ্দিন : আমি নিজে একজন অফিসার হিসেবে বলছি, যদি মিলিটারি অ্যাকশনে যাওয়া যেত, তাহলে এত ম্যাসাকার হতো না। আমি তখন সিলেটের শমসের নগরে ছিলাম কমান্ডিং অফিসার হিসেবে। সেখানে এয়ারফোর্সের নতুন ইউনিট গড়ার কাজ চলছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ঢাকার তেজগাঁও ফেলকন হলে একটি মিটিং ছিল। মিটিংটি ছিল কমান্ড অ্যান্ড ফ্লাইট সেইফটি মিটিং। ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিঠি পেয়ে আমি চলে এলাম ঢাকায় মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য। আমি ২২ তারিখে আসার পরে আমার স্ত্রীকে তার এক বান্ধবী ফোন করল। ফোন করে বলল, দোস্ত লবি এসেছে। লবি মানে শহীদ কর্নেল এলাহীর স্ত্রী। তোর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। তুই চলে আয়। আমার স্ত্রী বলল, আমার স্বামীও এসেছে। আমি তাকে নিয়ে চলে আসব। আমরা গুলশানে আমার স্ত্রীর বান্ধবীর বাসায় যাই। সেখানে আমরা সবাই আড্ডা মারলাম। আড্ডায় কর্নেল এলাহীর স্ত্রী বলছিল, ২৮ তারিখ শেষ দিনে আমরা সবাই বইমেলায় যাব। ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা সবাই ফেলকন হলে বসে আছি। অনুষ্ঠান শুরু হলো সকাল সাড়ে আটটায়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এলেন। তিনি স্টেজে গিয়ে এয়ার চিফের কানে কানে কিছু বললেন। এয়ার চিফের অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পারলাম কোনো সমস্যা হয়েছে। আমি ছিলাম কুর্মিটোলা বেইজের আন্ডারে। বেইজ কমান্ডার ছিলেন এয়ার কমডোর মশিউজ্জামান সেরনিয়াবাত। উনি আমাকে বললেন, সালাউদ্দিন তুমি আমার সঙ্গে আসো। আমরা গাড়িতে যাচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের হেলিকপ্টার পিলখানার উপর উড়ে চক্কর দিতে লাগল বিডিআর সৈনিকদের আত্মসমর্পণের জন্য। বিডিআর সৈনিকরা হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি চালালো। হেলিকপ্টার ব্যাক করল। হেলিকপ্টার নরমাল চক্কর দিচ্ছিল, কোনো বোমা বা অস্ত্র নিয়ে যায়নি। আমরা কুর্মিটোলা যাওয়ার পথে সেরনিয়াবাত স্যার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে দুজন আলোচনা করছিলাম এবং ওই ঘাঁটির সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে আমি আমার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে তার সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। আমরা সোজা চলে গেলাম রানওয়েতে। গিয়ে দেখি এরই মধ্যে আমাদের এফ-৭ ফাইটার বিমানে রকেটগুলো লাগানো হলো, আরেকটি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টারেও রকেট লাগানো হলো। আমরা প্রস্তুত। আমি যখন আমার কমান্ডারকে বললাম, স্যার ১৯৯৫ সালে যখন আনসার-বিডিআরের ঘটনা ঘটলো, আমি তখন বেইজের সিকিউরিটি অফিসার। জেনারেল নাসিম ওয়াজ আর্মি চিফ। আলতাফ চৌধুরী এয়ার চিফ। তখন আমাদের পাইলটরা দুটি এয়ার এ- ফাইভ জঙ্গিবিমান নিয়ে সফিপুর আনসার একাডেমির উপর কিছুক্ষণ উড়েছিল এবং নবম পদাতিক ডিভিশন গ্রাউন্ড সাপোর্ট দিয়েছিল। যার ফলে অল্প সময় পরেই খবর এলো আনসার-ভিডিপি বাহিনীর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। আমি এবং এয়ার কমডোর জামান তখন গোলাবারুদে সজ্জিত ফাইটার এয়ারক্রাফটের ডানার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। ওইদিকে ওই বিমানের পাইলটরাও রেডি। সবাই অপেক্ষারত, কেবল একটি নির্দেশের অপেক্ষায়। চোখের সামনে অতিচেনা মুখগুলো ভাসছে আর শঙ্কা এবং উত্তেজনায় ভেতরটা কাঁপছিল। আমি কমান্ডারকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম, স্যার, আর কতক্ষণ? উনি বললেন, আমরা প্রস্তুত, কেবল নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু হায়, সেই নির্দেশ আর এলো না। যে নির্দেশ বাঁচাতে পারতো অনেকগুলো সূর্যসন্তান। এমন সময় মেজর এমরান তার ২০ থেকে ২২ জন কমান্ডো নিয়ে কুর্মিটোলার মেইন গেটে চলে এলো। গেট থেকে কমান্ডারকে জানানো হলো, ওরা যে আসবে আমরা তো জানি না। আমি আমার কমান্ডারকে বললাম, স্যার নির্দেশ আসতে যদি পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নেয়, তারা এটা মেনে নেবে না। কমান্ডারের নির্দেশে আমি তাদের শান্ত করে পাশে নিয়ে এলাম। এর মধ্যে এয়ার চিফ জিয়াউর রহমান সাহেব এলেন। তিনি বেইজ কমান্ডারকে জিজ্ঞেস করলেন, রেডি কি-না। বেইজ কমান্ডার বললেন, স্যার আমরা পুরোপুরি রেডি। উনি বললেন, নির্দেশের জন্য অপেক্ষা কর। নির্দেশ তো আর আসে না। আমরা অপেক্ষা করছি। যত বড় নিরাপত্তা বিশ্লেষক হোক বা সামরিক বিশারদ হোক, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে, আমার সহকর্মীদের ধরে ধরে হত্যা করছে আর আমরা ওয়েট অ্যান্ড সি পলিসিতে যাব, এটা হতে পারে না।
ঠিকানা : ওই সময় তো প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছিলেন?
সালাউদ্দিন : প্রধানমন্ত্রী আর্মি চিফ এবং এয়ার চিফের সঙ্গে কথা বলেছেন, বৈঠক করেছেন, মোস্টলি আর্মি চিফ। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি দল আক্রান্ত সেনা অফিসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য পিলখানার অতিকাছে চলে গিয়েছিল। তাদের সেখানে থামানো হলো। কথিত আছে, এ ঘটনার পর আর্মির অনেক ইয়ং অফিসারের চাকরি চলে যায়। তারা আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা সেনাবাহিনীর ওপর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ। এরকম ভাবলে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড রোধ করা যেত। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নিলেন বলে আমাদের মনে সন্দেহ। এমনকি সেনাকুঞ্জের মিটিংয়ে চেয়ার ভাঙার ঘটনাও ঘটে। অফিসাররা প্রচণ্ড আপসেট ছিলেন। নিহত কর্মকর্তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও কিছু আওয়ামী নেতা সেনানিবাস মসজিদে এলে সেনা অফিসাররা ‘ভারতীয় দালাল’ বলে তাদের দিকে তেড়ে এলে সিনিয়র অফিসারদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। এ ঘটনা ঘটার আগে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, সৈনিকদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ক্ষোভটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, সৈনিকরা কমান্ড ভেঙে তাদের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে গিয়ে গোপনে দেখা করেছিলেন। তারা লোকাল এমপি ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, শেখ সেলিম এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাদের ক্ষোভের কথা বলেছেন। এটা তো কমনসেন্সের ব্যাপার যে, একদল সিপাহী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে গেছে চেইন অব কমান্ড ভেঙে, সেটাকে অ্যাডড্রেস করা হলো না, গুরুত্ব দেয়া হলো না। এই গুরুত্ব না দেয়া হলো প্রথম ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ব্যর্থতা হলো, যেসব কর্মকর্তাকে গুলি করা হলো, আমি নিশ্চিত হয়তো তারা সবাই মারা যাবেন, অনেকেই কালভার্টের নিচে ছিলেন, কেউ কেউ অন্য জায়গায় ছিলেন, ২৬ তারিখ পর্যন্ত অনেকে বেঁচে ছিলেন লুকিয়ে। কেউ পায়ে গুলি খেয়েছেন, কেউ শরীরের অন্য কোথাও গুলি খেয়েছেন। তারা ব্লিডিংয়ে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর এত কর্মকর্তা এবং কর্মকর্তার পরিবারকে রক্ষায় যদি আমাদের সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে এ কৌশলকে আমি বলব অবাস্তব, অপরিপকস্ফ এবং হটকারী কৌশল। এমন একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড যিনি বা যারা হতে দিয়েছেন, তাদের স্ব স্ব পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। আর যদি বুঝে থেকেও কিছু না করে থাকেন, তাহলে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা দায়ী।
ঠিকানা : পিলখানার হত্যাকাণ্ড কি সাজানো?
সালাউদ্দিন : আমি আগেই বলেছি, ক্ষোভ সৃষ্টির কারণ হচ্ছে মইন-ফখরুদ্দীন সরকার। আর ক্ষোভটার যেভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে তা প্রতিরোধে ব্যর্থতা হচ্ছে বর্তমান সরকারের। কারণ তারা জানতেন কী হচ্ছে। আপনাদের নিশ্চয়ই বড়াইবাড়ি সীমান্তের কথা মনে আছে। সীমান্তে বাংলাদেশী বিডিআর কতজন বিএসএফকে মেরে ফেলেছিল? তখন ডিজি জেনারেল ফজলুর রহমান। এটা আওয়ামী লীগের গতবারের ক্ষমতায় থাকার সময় হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের বিডিআর যদি দুর্বল হয়, তাহলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য বিরাট অ্যাডভান্টেজ এবং তাদের জন্য বিজয়। পিলখানার ঘটনার সঙ্গে এ ঘটনা নিয়েও মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইয়ং সামরিক সদস্যদের মধ্যে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অভিযোগ—এটা হতে দেয়া হয়েছে। এটাকে রোধ করা যেত, রোধ করা হয়নি—যখন সেনা অফিসাররা মারা যাচ্ছেন আর প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রীরা বলছেন, এর সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন আছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে আমাদের জন্য!
ঠিকানা : আমাদের রাজধানীতে সেনাবাহিনীর এতগুলো অফিসারকে মেরে চলে গেল, গোয়েন্দা সংস্থা কী করেছে?
সালাউদ্দিন : এটা তো গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা। বিডিআরের গোয়েন্দা সংস্থা এ খবরটা উদঘাটন করেছিল। বিডিআর সদস্যরা পিলখানার ভেতরে লিফলেট ছেড়েছিল বিডিআর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিলি করার আগেই তারা সেটা সংগ্রহ করেছিল এবং কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল।
ঠিকানা : এ ঘটনার কি তদন্ত রিপোর্ট বেরিয়েছে?
সালাউদ্দিন : দুটি তদন্ত পর্ষদ গঠিত হয়েছে। লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সামরিক পর্ষদ দ্বারা এই নির্মম ঘটনার তদন্ত হয়েছিল। সেই তদন্তে যে তথ্য এবং সুপারিশ এসেছিল, তা এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমি সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছে শুনেছি—এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়া হয়, উনি দেখে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘তাহলে দোষীদের মধ্যে আমার নামটাও লিখে দেন।’
ঠিকানা : তাহলে এ রিপোর্ট আর প্রকাশ পাবে না?
সালাউদ্দিন : এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি।
ঠিকানা : এতগুলো সামরিক অফিসারকে মারা হলো। ইতোমধ্যে বিচার করা হয়েছে। কারও দুই বছরের জেল, কারও পাঁচ বছরের জেল, আবার কারও সাত বছরের জেল— এটাই কি সুবিচার?
সালাউদ্দিন : এ বিচার যখন চলছিল, তখন অনেক আসামিই বন্দি থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। তাছাড়া আমার পরিচিত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিল না।
ঠিকানা : এটা কারা করেছেন এবং কেন করেছেন?
সালাউদ্দিন : অনেকেই



মিলিয়ে দেখুনতো জাফর স্যারের মেয়ে কিনা!!!

পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ভূমি কমিশানে লর্ড এরিক এভেরি্র (পূর্বতিমুর বিচ্ছিন্নের নায়ক) সাথে আছেন এদেশীয় ড. জাফর ইকবাল, এ্যাড সুলতানা কামাল চক্রবর্তী (স্বামী শ্রী রঞ্জন চক্রবর্তী) (২য় ছবি), ড. স্বপন আদনান (সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), ব্যারিষ্টার সারা হোসেন (স্বামী ডেভিড বার্গমান) (৩য় ছবি), ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরদা (শেষের ছবিতে বাম পাশের মহিলা) প্রমুখ- এর সাথে যোগ হয়েছে মুক্তমনা নামের পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থে পরিচালিত কিছু গ্রুপ, যাদের মুল কাজেই হচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো। (জাফর ইকবালের বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে লিংকটি পড়ুন)


জাফর ইকবাল স্যার, নিজের পূত্র কণ্যাদের আগে মানুষ করেন, তারপর আমাদেরকে নীতির কথা শোনান। আমাদের মা-বোনদের হিজাব বোরকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে নিজের মেয়েকে অন্তত বাঙালী হবার শিক্ষা দিন। আপনার মেয়ের কান্ডকীর্তী দেখে বাঙালী হিসেবে লজ্জিত হচ্ছি । দেখেন কান্ড : 

► সামহোয়্যারব্লগ ► http://tinyurl.com/3uwdqov
 
► বর্ণমালাব্লগ ►http://www.amarbornomala.com/details10130.html
 
► প্রিয়বই ► http://www.priyoboi.com/2005/11/blog-post_05.html

জাফর ইকবালের কণ্যা ইয়েশিমের ফেসবুক এলবাম থেকে যে কেউ দেখতে পারেন ছবিগুলো । লিংক : Click This Link (আপডেট)


জাফর কন্যার বাঙালীয়ানা পোশাক ও আচরনে ফুটে উঠেছে। এই জাফর ইকবালেরাই বাঙালীত্ব কপচিয়ে হাজারো তরুনের ব্রেন ওয়াশ করে।

প্রগতিশীল নাস্তিক হতে হলে ছেলেবন্ধুর সংখ্যার কোন লিমিট রাখা যাবেনা। ...। মদ খাওয়া ধরতেই হবে । বাবা জাফর ইকবাল কি এই শিক্ষাই দিয়েছেন কণ্যাকে ?


 নাস্তিকতা আর প্রগতিশীলতা বটে। হলী খেলার বেলেল্লাপনা ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক আচরণ বটে। নাস্তিক  বাবার শিক্সায় শিক্ষিত কণ্য! (জাফর ইকবাল এই মেয়েকেই বলেছিলেন, শুধু মুসলমান বেহেশতে যাবে, এইটা বাজে কথা, আর তার বইয়ের পাতায় পাতায় পাবেন ইসলামী পোশাকের কুৎসা, দাড়ি টুপি নিয়ে অভদ্র মন্তব্য, ওজুর পদ্ধতি নিয়ে কৌতুক আর ইসলাম বিরোধী যেকোন কিছুর প্রশংসা)


প্রগতিশীলতা আর বাঙালীয়ানার জ্বলজ্যান্ত উদাহরন। এই জাফর ইকবাল ই বলে রবীন্দ্রনাথকে পূজা করতে হবে


প্রগতিশীল ফ্যামিলি অর্থাৎ নাসতিক ফ্যামিলি..(এটা তারই মেয়ে..)



ভিডিও () সহ নাইটক্লাব বা ছাত্রীহোষ্টেলের এই ছবি যখন অনলাইনে এসেছিলো, ইকবালের পূজারীরা প্রপাগান্ডা চালিয়েছিলো তার মেয়ৈ বলে । এখন প্রশ্ন হলো কোনটা তার মেয়ে ? আর মেয়েদেরকে কোন বাবা কি করে এমন নষ্ট হবার ট্রেনিং দিতে পারে ? মুখে বাঙালীয়ানা আর লাইফস্টাইলে পশ্চিমা নগ্নতা!

একজন ব্লগারের ব্লগ থেকে , "উনি হলেন আমাদের দেশের বিশিষ্ট পরিমল জাফরের একমাত্র মেয়ে ইয়েছিম ইকবাল। উনার বাবা দেশের তরুণীদের বোরকা, হিজাব নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত শুনলাম , আর আমরা আমেরিকা প্রবাসিরা মাঝে মাঝে এমন কু-সন্তানের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি যারা কিনা এদেশে এসে বাংলাদেশের কালচারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। যার মেয়ে এখানে একাদিক ছেলের সাথে লিভ টুগেদার আর মদ পান করে তার বাবাতো চাইবে বাংলাদেশেও এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ুক। থু তোর প্রগতিশীলতার মুখে ভন্ড জাফর!! থু তোর এমন মেয়ের মুখে। শুধু শিক্ষিত আর জ্ঞানী হলে মানুষ হওয়া যায়না।"